স্টাফ রিপোর্টার, যশোর:
২০ বছর পর মায়ের খোঁজে যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মুন্সিগঞ্জের মুস্তাকিন আহমেদ (২৫)। স্মৃতি হিসেবে সঙ্গে এনেছেন মায়ের সাথে কাটানো শিশু বয়সের কয়েকটি ছবি। মায়ের ঐ ছবিগুলোই বড় করে পোস্টার বানিয়ে ‘মাকে খুঁজছি’ এমন শিরোনামে শহরের সড়কের মোড়ের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, বাড়ির প্রাচীরে সাটছেন তিনি। বিলিও করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। সেই পোস্টারে তিনি লিখেছেন এই মহিলা আমার মা, আমার মা আজ ২০ বছর যাবৎ হারিয়ে গেছে। আমার মায়ের বাড়ি যশোর জেলায়। আমার মাকে যদি কোন স্ব-হৃদয়বান ব্যক্তি চিনে থাকেন, তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে আমার মাকে খুঁজে পেতে দয়া করে সাহায্য করুন। পোস্টারে দুটি মোবাইল নম্বরও দেয়া হয়েছে। গত দুই তিন ধরে মায়ের অনুসন্ধান করেও কোনো সূত্র না পেয়ে হতাশ ছেলেটি। তারপরও মনের কোণে আশা, হয়তো ফিরে পাবেন হারানো মাকে।
মায়ের খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরা মুস্তাকিনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আবদুল খালেক। মুন্সিগঞ্জের দোহায় কুয়েত মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে মাওয়া ফেরিঘাটে এখন বিক্রি করেন ডাব।
মুস্তাকিন বলেন, তিনি মায়ের শুন্যতা নিয়েই বড় হয়েছেন। মায়ের আদর ভালোবাসা কি সেটা কখনও বোঝেননি তিনি। তাই এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পুরাতন বাক্সে মায়ের ছবি পেয়েই মাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছেন। মাকে এক পলক দেখার জন্য মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যশোরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে চলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, তার বাবা আবদুল খালেক প্রথম স্ত্রীকে রেখে ভারতে চলে যান প্রায় ২৫ বছর আগে। ভারতে গুজরাটে অবস্থানকালে তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে তার বাবা ও মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেখানেই মুস্তাকিনের জন্ম হয়। তার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার বাবা তাদেরকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। সংসারে প্রথম স্ত্রী থাকা ও ভারতে অবস্থানকারী মেয়েকে বিয়ে এবং সন্তান থাকায় পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারেননি। এক পর্যায়ে প্রায় ২০ বছর আগে তার মাকে ডিভোর্স দেন বাবা আব্দুল খালেক। সেই থেকে সৎ মায়ের কাছেই আছে মোস্তাকিন। কয়েক বছর আগে মুস্তাকিনের বাবা আবদুল খালেকও মারা গেছেন।
মোস্তাকিনের বলেন, তার নানা বাড়ি যশোরে শুধু এতটুকুই জানতেন। এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পুরাতন বাক্সে অনেকগুলো পুরাতন ছবি পান। তার মধ্যে দুটি ছবিতে দেখতে পান এক মহিলার কোলে ও পাশে একটি ছেলে। আর সেই ছবিটি ভারতের কোন এক জায়গার। মোস্তাকিনের এক চাচা মেহেদী হাসান তাকে নিশ্চিত করেছেন এই ছবি দুটি তার মায়ের। এরপর মোস্তাকিন মায়ের সন্ধানে নেমে পড়েছেন রাস্তায়। শুক্রবার থেকে তিনি যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।