ঝিলপাড় বস্তির জায়গা দখল নিয়ে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

অপরাধ অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা বানিজ্য রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর রূপনগরে আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তির জায়গা নিয়ে আগের দখলদার এবং নতুন করে দখল করতে চাওয়া স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন বস্তিবাসী।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বস্তির জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। আগে যার দখলে ২০টি ঘর ছিল তাকে ১০টি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আবার যার ১০টি ঘর ছিল তাকেও ৫টি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় ছেড়ে না দিলে ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
রূপনগর ঝিলপাড় বস্তির ঘর মালিক, ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়। জায়গার দখল নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
জানা যায়, বস্তির তিন অংশ ঝিলপাড়, আরামবাগ ও চলন্তিকা নিয়ন্ত্রণ করতেন কারেন্ট দুলাল ওরফে গ্যাস দুলাল, রহিম শিকদার ও শামসু। তারা মূলত অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন দিতেন এবং কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। তবে তারা কখনো ঘর ভাড়ার টাকায় ভাগ বসাতেন না। জায়গা যাদের দখলে ছিলো তারাই ঘর ভাড়া তুলতেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বস্তির চারদিক ঘিরে যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগসহ বেশ কয়েকটি অফিস রয়েছে। এসব অফিসও অবৈধ জায়গাতেই। স্থানীয়রা জানান, এসব অফিসের ছেলেরাই ঘর ভাড়া তুলতো। তাদের বেশির ভাগই চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। বস্তির জমিও মূলত তাদেরই দখলে ছিলো।
বস্তির ১১টি ঘরের ‘মালিক’ মাজেদ শিকদার বলেন, এখানে আমার ১১টি ঘর ছিল, সবই পুড়ে গেছে। প্রত্যেক ঘরেই ভাড়াটিয়া ছিল। ৫টি ঘর ছেড়ে দিতে বলেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। ফলে সেখানে এখন ঘর করতে পারছি না। আরও অনেকের কাছে জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
আরেক ‘মালিক’ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার ১০টি ঘরের মধ্যে ৪টি ঘরের জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কে ছেড়ে দিতে বলেছে, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখানকার নেতাকর্মীরাই সবাইকে এই কথা বলছে।
মিনহাজুল আবেদীন নামে আরেকজন বলেন, আমার ১৬টি ঘরের মধ্যে ১০টি ঘরের জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। সেখানে নাকি নেতাকর্মীরা ঘর ওঠাবেন। তাদেরও নাকি টাকা-পয়সার দরকার আছে।
ঘরের জায়গা ছেড়ে দেবেন নাকি দেবেন না জানতে চাইলে মিনহাজুল বলেন, তাদের শক্তি আছে, তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। হয়তো কিছু ঘরের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এটা তো সরকারি জায়গা, কিছুই করার নেই। আবার অনেকে ছাড়তে রাজি নয় কাণ তাদের ক্ষমতা আছে। কয়েকদিন ধরে যেভাবে শুনছি, তাতে মনে হচ্ছে যেকোনো দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, এটা সরকারি জায়গা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির লোক নিজে থাকার নাম করে ঘর ভাড়া দিয়ে আসছিল। এখন আর কাউকে ভাড়া দেওয়ার জন্য ঘর করতে দেওয়া হবে না। যারা থাকবে কেবলমাত্র তারাই এখানে ঘর করতে পারবে।’
স্থানীয় কাউন্সিলর রজ্জব আলী বলেন, এখানে সংঘর্ষের কোনো আশঙ্কা নেই। প্রশাসন রয়েছে মেয়র, সংসদ সদস্য সবাই এখানে দেখভাল করছেন। কাজেই এখানে কেউ হট্টগোল করতে পারবে না। এখনও কাউকে ঘর তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বস্তির চারদিকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যাতে কেউ গ-গোল পাকাতে না পারে সে কারণে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *