নুসরাত ও ফারাজের জন্য ভালোবাসা

Uncategorized অন্যান্য

নিউজ ডেক্সঃ
বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম বার পিপিএম এডিশনাল আইজিপি (পিবিআই) ঃ আমাদের উদার সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে আমরা যে যতই অহংকার করি না কেন, আমাদের মেয়ে শিশুরা বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বুঝতে পারে কোথাও যেন একটা অদৃশ্য অসুরশক্তি আছে যা তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অগ্রগতির রোধক। নিজ নিজ বিবেচনায় তারা শিখে, এ অশুভশক্তির প্রকাশ্য প্রতিবাদ করা যায় না, এড়িয়ে চলতে হয়!!?? কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে থাকাকালীন স্কুলে স্কুলে উপস্থিত হয়ে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীদের সাথে একটি মৌখিক চুক্তি করেছিলাম– তাদের অভিযোগ ও পরিচয় আমি ছাড়া, (১) যার বিরুদ্ধে অভিযোগ অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তি জানবে না (২) অভিযোগকারী ছাত্রী না চাইলে, স্কুলশিক্ষক এমনকি তার বাবা মা-ও জানবেন না এবং (৩) ছাত্রীটিকে কখনো থানা-পুলিশের কাছে বা আদালতে যেতে হবে না। তখন দেখেছি এই তিন শর্তে শত শত কিশোরী ব্যক্তিগতভাবে কিভাবে আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল, তাদের ছোট-বড় সব নির্যাতনের সমস্যা সমাধানের আশায় – শুধু একটি ফোন নম্বরের মাধ্যমে। ফেনী’র মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত এ সুযোগটি পান নি। নুসরাত জাহান রাফি – একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত ধার্মিক পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন কিশোরী। তাঁর প্রতি মধ্যবয়সী একজন পিতৃতুল্য শিক্ষকের নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ করে দেখিয়েছেন আমাদের সমাজের অদৃশ্য অসুরশক্তি কতটা সংঘবদ্ধ, ভয়াবহ ও মহাবলশালী। অন্যদিকে ফারাজ আইয়াজ হোসেন – ইংরেজী মাধ্যমে পড়া ধনাঢ্য পরিবারের সদ্য কৈশোর পেরোন সন্তান। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গী হামলার সময় সারি সারি লাশের সামনে বুক চিতিয়ে দাড়িয়েছিলেন তাঁর দুই সহপাঠিনী বন্ধুর জীবনের পক্ষে।
ফারাজ তাঁর বন্ধুদের জীবন রক্ষা করতে পারেন নি, নিজেও চলে গেছেন তাঁদের সাথে। কিন্তু ফারাজ নিজের আত্মাকে ধবংস হতে দেন নি (যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে যান নি) – বাঁচিয়ে গেছেন মানবিকতা, ন্যায় ও নৈতিকতা। ঠিক তেমনি নুসরাতও মৃত্যুকে এড়াতে পারেন নি, কিন্তু নিজের শরীরকে হত্যা (আত্মহত্যা ) করেন নি – বরং আত্মসম্মান রক্ষার্থে প্রতিবাদ করে প্রতিষ্ঠা করেছেন অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের জয়। সন্তানতুল্য অসীম সাহসী এই দুই ক্ষণজন্মা কিশোর-কিশোরীর অন্তরের অমিত শক্তির প্রতি আমাদের বুক ভরা শ্রদ্ধাঞ্জলি।


বিজ্ঞাপন