শিশুদের মাঝে তীব্র অপুষ্টির বিপর্যয়কর মাত্রার কারণে বিশ্ব এখন ‘ভার্চুয়াল টিন্ডারবক্স—- ইউনিসেফ

Uncategorized জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ!! ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মহামারির প্রভাবে বাজেট কাটছাটের ফলে জীবন রক্ষাকারী থেরাপিউটিক ফুড চিকিৎসার প্রয়োজন এবং খরচ দুটোই ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। শেষোক্ত ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে পারে, ইউনিসেফ সতর্ক করে বলছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তায় ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব, মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভুগতে থাকা দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু দেশে ক্রমাগত খরা পরিস্থিতির মতো বৈশ্বিক অভিঘাত সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে কৃশকায়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করছে !! মঙ্গলবার ১৭ মে শিশুদের অবস্থা নিয়ে নতুন এক সতর্কবার্তায় ইউনিসেফ বলেছে, কৃশকায় শিশুর সংখ্যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও বাড়ছিল, যা বিশ্বকে একটি জটিল বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে নিমজ্জিত করেছে এবং এই পরিস্থিতি ক্রমেই আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ১৭ মে, প্রকাশিত ‘কৃশকায় অবস্থা: শিশুদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে একটি উপেক্ষিত জরুরি অবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, শিশুদের মধ্যে কৃশকায় পরিস্থিতির মাত্রা বৃদ্ধি এবং জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও রুগ্ন শিশুদের জীবন বাঁচানোর জন্য বৈশ্বিক অর্থায়ন বর্তমানে হুমকির মুখে। এ বিষয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, “ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করার আগেই সংঘাত, জলবায়ুজনিত অভিঘাত ও কোভিড-১৯ পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের খাদ্য যোগানের মূলে আঘাত করেছে। বিশ্ব দ্রুত প্রতিরোধযোগ্য শিশুমৃত্যু এবং কৃশকায় শিশুদের একটি ভার্চুয়াল টিন্ডারবক্সে পরিণত হচ্ছে।”
বর্তমানে অন্তত ১ কোটি শিশু বা প্রতি ৩ জনে ২ জন শিশু কৃশকায়। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে পরিচিত তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবহারযোগ্য থেরাপিউটিক খাদ্য (আরইউটিএফ) পায় না। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তায় ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব, মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভুগতে থাকা দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু দেশে ক্রমাগত খরা পরিস্থিতির মতো বৈশ্বিক অভিঘাত সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে কৃশকায়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করছে। এদিকে, কাঁচামালের দাম উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধির কারণে আগামী ছয় মাসে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবহারযোগ্য থেরাপিউটিক খাদ্য বা রেডি-টু-ইউজ থেরাপিউটিক ফুডের দাম ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ব্যয়ের বর্তমান মাত্রা বিবেচনায় জীবন রক্ষাকারী এই চিকিৎসা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা আরও ৬ লাখ বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিবহন ও সরবরাহ খরচও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাসেল বলেন, প্রতি বছর লাখ লাখ শিশুর জন্য এই থেরাপিউটিক পেস্টের প্যাকেটগুলো জীবন ও মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে। বৈশ্বিক খাদ্যের বাজারের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামাল দেওয়া সম্ভব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেই সরবরাহ শৃঙ্খলের শেষ ভাগে আছে নিদারুণ অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা, যাদের জন্য বিষয়টি সামাল দেওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। কৃশকায় শিশুরা তাদের উচ্চতার তুলনায় খুব বেশি শীর্ণ হয়ে থাকে, যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এটি অপুষ্টির সবচেয়ে তাৎক্ষণিক, দৃশ্যমান ও মৃত্যুঝুঁকি তৈরির ধরন। বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ কোটি ৩৬ লাখ শিশু কৃশকায় অবস্থার শিকার, যার কারণে এই বয়সী শিশুদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মারা যায়। দক্ষিণ এশিয়া কৃশকায়তার ‘কেন্দ্র’ হিসেবে রয়ে গেছে, যেখানে প্রতি ২২ জনের মধ্যে প্রায় ১ জন শিশু কৃশকায়, যা সাব-সাহারা আফ্রিকার তুলনায় তিনগুণ। আর বাকি বিশ্বের দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ হারে কৃশকায়তার সম্মুখীন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানে ১১ লাখ শিশু এই বছর কৃশকায়তার শিকার হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে, যা ২০১৮ সালের প্রায় দ্বিগুণ। ‘আফ্রিকার শৃঙ্গ’ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে খরার অর্থ হচ্ছে কৃশকায় শিশুর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে ১৭ লাখ থেকে ২০ লাখে পৌঁছতে পারে, যেখানে সাহেল অঞ্চলে এই হার ২০১৮ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। শিশুদের অবস্থা নিয়ে সতর্কবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুলনামূলক ভাবে উগান্ডার মতো স্থিতিশীল দেশগুলোতেও ২০১৬ সাল থেকে কৃশকায় শিশুর সংখ্যা ৪০ শতাংশ বা তার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ও পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য খাবারের গুণমান ও পরিমাণে অপর্যাপ্ততা তৈরি হয়েছে। তীব্র চক্রাকার খরা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সেবা প্রাপ্তির পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত অভিঘাত ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যায় অবদান রাখছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কৃশকায় শিশুদের চিকিৎসায় প্রাপ্ত সহায়তা অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে রয়ে গেছে, যা আগামী বছরগুলোতে আরও কমবে বলে ধারণা করা হয়। ২০২৮ সালের আগে প্রাক-মহামারি পর্যায়ে পুনরুদ্ধারের আশাও খুব ক্ষীণ। সংক্ষিপ্ত একটি নতুন বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাত ওডিএ’র (অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) মাত্র ২.৮ শতাংশ এবং মোট ওডিএ’র মাত্র ০.২ শতাংশ ব্যয় হয় কৃশকায় শিশুদের চিকিৎসায়। প্রতিটি কৃশকায় শিশুকে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিসেফ আহ্বান জানাচ্ছে, বেশি সংখ্যক কৃশকায় শিশু থাকা শীর্ষ ২৩টি দেশের এই অসুস্থ শিশুদের কাছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সরকারগুলোকে ২০১৯ সালের ওডিএ’র চেয়ে অন্তত ৫৯ শতাংশ বেশি সহায়তা প্রদান করতে।


বিজ্ঞাপন