সুমন হোসেন (যশোর) ঃ যশোরের চৌগাছায় বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে মিরাজ ১৭ বছর বয়সী এক ছেলে হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সহিত জড়িত আসামীকে গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার করলো পিবিআই যশোর, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, নিহত মিরাজ যশোরের চৌগাছা থানাধীন দিঘলসিংহ গ্রামস্থ মোঃ সবুজ হোসেন এর ছেলে। মিরাজ ৯ম শ্রেণীতে লেখাপড়ার পাশাপাশি মোঃ রাজু হোসেন এর নিকট মাঝে মধ্যেই মাইক্রোবাস চালান শিখত।
গত সোমবার ১২ জুন, রাত অনুমান ৮ টার সময় মিরাজ হোসেন @ চয়ন বন্ধুদের সাথে পিকনিক করার কথা বলে গ্রেফতার কৃত রাজু হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে বাড়ী থেকে বের হয় এবং ঐ দিন রাতে যে আর বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। মিরাজ হোসেন (চয়ন) এর পরিবারের লোকজন তার মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পায়। পরদিন গত সোমবার ১৩ জুন, সকাল অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় চৌগাছা থানাধীন মাধবপুর গ্রামস্থ জলকার মাধবপুর ধোনারখাল কপোতাক্ষ নদে উত্তর পাড়ে পানির কিনারায় একটি বস্তাবন্দি অবস্থায় মিরাজ হোসেন @ চয়ন এর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে নিহত মিরাজ হোসেন @ চয়ন (১৭) এর পিতা মোঃ সবুজ হোসেন (৪০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে যশোর চৌগাছা থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-১৪/০৬/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে দায়ের করেন। পিবিআই, যশোর স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পুলিশ সুপার পিবিআই, যাশোর এর হাওলা মতে এসআই (নিঃ) শরীফ এনামুল হক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং তদন্তের জন্য তৎপর হন।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নিদের্শনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) শরীফ এনামুল হক সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ যশোর জেলার আভিযানিক দল কর্তৃক পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে গত মঙ্গলবার ১৪ জুন দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটের সময় অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩), পিতা-মৃত ইসমাইল হোসেন মণ্ডল, সাং-বহিলাপোতা, থানা-চৌগাছা, জেলা যশোরকে যশোর জেলার চৌগাছা থানাধীন বিকরগাছা ছুটিপুর রোড পৌরসভা গেট বটতলা মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, মোবাইল সিম ও মাইক্রোবাস আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) পেশায় একজন মাইক্রোবাস ড্রাইভার। মিরাজ হোসেন @ চয়ন (১৭) অভিযুক্তের হেলপার হিসেবে কাজ করতো।
ঘটনার দিন গত ১২ জুন রাত ৮ টার সময় অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) ভিকটিম মিরাজ হোসেন @ চয়নকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে রাতের বেলায় ভিকটিমের বাড়ীর সামনে মাইক্রোবাস রেখে একই মাইক্রোবাসে দুজনে বসে মোবাইল ফোনে ভিডিও গান দেখে। একপর্যায়ে রাত গভীর হলে গত ১৩ জুন, রাত অনুমান ২ টার সময় অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) ভিকটিম মিরাজ হোসেন @ চয়ন (১৭) কে বলাৎকারের উদ্দেশ্যে ডিমটিমকে জড়িয়ে ধরতে গেলে ভিকটিম বিষয়টি বুঝতে পেরে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
তখন অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) এমন কাজ আর করবে না বলে ভিকটিমকে বুঝিয়ে আবার গাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে মোবাইলে ভিডিও দেখতে দেয়।
কিন্তু অভিযুক্ত রাজু হোসেন পুনরায় একই কাজ করার চেষ্টা করলে ভিকটিম মিরাজ হোসেন চয়ন (১৭) ঘুম আসছে বলে গাড়ির পিছনের ছিটে গিয়ে শুয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আভিযুক্ত রাজু হোসেন গাড়ির পিছনের ছিটে গিয়ে ভিকটিমকে বলাৎকারের উদ্দেশ্যে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলে ভিকটিম বাধা দেয়।
তখন অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) ভিকটিমের গলা গামছা দিয়ে পেচিয়ে ধরলে ভিকটিম মিরাজ হোসেন চয়ন (১৭) আবার বাধা দিলে অভিযুক্ত ভিকটিমের গলা চেপে ধরে তখন ভিকটিম শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত মোঃ রাজু হোসেন (২৩) ভিকটিমের মৃতদেহ বস্তুায় ভরে এবং বস্তুর ভিতর ২ টি ইট দিয়ে বস্তার মুখ বেধে চৌগাছা থানাধীন মাধবপুর গ্রামস্থ জলকার মাধবপুর ধোনারথাল কপোতাক্ষ নদে উত্তর পাড়ে নিয়ে পানিতে ফেলে দেয় মর্মে স্বীকার করে। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামীকে গতকাল বুধবার ১৫ জুন, আদালতে প্রেরণ করা হলে সে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।