পিকে হালদারের আরও ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের নতুন তথ্য পেয়েছে দুকক

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ দেশের আলোচিত আর্থিক কেলেঙ্কারির নায়ক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের আরও ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের নতুন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুকক)।

বন্ধুদের ফাঁসিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। রিলায়েন্স ফিন্যান্স থেকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কৌশলে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য, কোনোরকম আবেদন ও দরকারি কাগজপত্র ছাড়াই বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়ার পর জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয় কাগজপত্র।
আর ভয়ংকর এই জালিয়াতির কাজে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ন্যাম করপোরেশনের মালিক আব্দুল আলীম চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজনকে ব্যবহার করেন পিকে হালদার। এ ঘটনায় শিগগিরই আরেকটি মামলা করতে যাচ্ছে দুদক।

এদিকে দীর্ঘ তদন্তের পর পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে কানাডায় ১০০ কোটি, ভারতে ২০০ কোটি ও দুবাইয়ে ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন তিনি। অর্থ পাচারের একটি মামলার তদন্ত শেষে সংস্থাটির তদন্ত দল ২৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট চূড়ান্ত করেছে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা; ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২), (৩) ধারায় চার্জশিট দাখিলের সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গণমাধ্যমে বলেন, এরই মধ্যে পিকে হালদারের বিভিন্ন উপায়ে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কানাডা, দুবাই ও ভারতে তিনি বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন। ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। পিকে হালদারের মামলাগুলোর তদন্ত কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে একটি মামলার চার্জশিট কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একাধিক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিকে সিন্ডিকেটের আরও ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। পিকে হালদার রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের এমডি থাকাকালে তার বন্ধু ও ন্যাম করপোরেশনের মালিক আব্দুল আলীম চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজশে এই টাকা আত্মসাৎ করেন। আব্দুল আলিম চৌধুরী কাগজে-কলমে ন্যাম করপোরেশনের মালিক হলেও বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। তারপরও রিলায়েন্স ফিন্যান্সের এমডির ক্ষমতাবলে পিকে হালদার তার বন্ধু ও জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে আবেদন ছাড়াই ২০ কোটি টাকার ঋণ দেন। রেকর্ডপত্র থেকে দুদক জানতে পেরেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ঋণ অনুমোদন করা হয়। আর ঋণ আবেদন তৈরি করা হয় একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর। ঋণ দেওয়ার পর জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এভাবে পিকে হালদার তার বন্ধু আব্দুল আলীম চৌধুরীকে দিয়ে বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদক কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান।

কমিশনে জমা দেওয়া দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি চেকের মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের স্টেশন রোড শাখা থেকে প্রায় ২৩ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা। জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইরফান আহমেদ খানের নামে এই টাকা তোলা হয়। ২০১৭ সালে ৭ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক একেএম শহীদ রেজার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ফ্যাশন প্লাস ও পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেডের নামে। ২০১৭ সালে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়।

এই টাকা তোলা হয় সুব্রত দাস ও শুভ্রা রানী ঘোষের মালিকানাধীন অ্যান্ড বি ট্রেডিংয়ের নামে। একই প্রক্রিয়ায় আনান কেমিক্যালের ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ নিলেও একটি টাকাও ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়নি।

কৌশলে পুরো টাকা বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে লোপাট করা হয়। ২০১৬ সালের জুনে দুটি চেকের মাধ্যমে ঋণের ৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। ওয়াকাহামা লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সরানো হয় এই টাকা। একই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তরের পর পিকে হালদারের ব্যক্তিগত হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। এভাবে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

অভিযুক্ত কমিশনে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন-প্রশান্ত কুমার হালদার, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পূর্ণিমা রানী হালদার, রাজিব সোম, রতন কুমার বিশ্বাস, ওমর শরীফ, মো. নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, এমএ হাশেম, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, মো. নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জি, রাশেদুল হক, সৈয়দ আবেদ হাসান, নাহিদা রুনাই, আল মামুন সোহাগ, রাফসান রিয়াদ চৌধুরী ও রফিকুল ইসলাম খান। তারা সবাই পিকে সিন্ডিকেটের বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *