পিবিআই গাজীপুর কর্তৃক ৫ বছর পর হোতাপাড়ায় হোটেলে বৈশাখী (আবাসিক) চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাত মহিলা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ প্রায় ৫ (পাঁচ) বছর পর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন হোতাপাড়ায় বৈশাখী আবাসিক হোটেলে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাত মহিলা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল পিবিআই গাজীপুর জেলা, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।

জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল ২০১৮ সালে জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়া ফাঁড়ীর পুলিশ সংবাদ পায় যে, বৈশাখী আবাসিক হোটেলে একজন মহিলার লাশ রয়েছে।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে হোতাপাড়া ফাঁড়ীর পুলিশ এসআই (নিঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি টিম উক্ত আবাসিক হোটেলের নিচ তলায় জেনারেটর রুমে ড্রামের ভিতরে অজ্ঞাতনামা মহিলার (বয়স অনুঃ ২৫ বছর) মৃত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

পরবর্তীতে এসআই (নিঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ী বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানার মামলা নং-১০০, তারিখ-২০/০৪/২০১৮ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করে। জয়দেবপুর থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় ৩ বছর তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে মামলাটি তদন্ত শেষে চুড়ান্ত রিপোর্ট “সত্য” আদালতে দায়ের করলে আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

পুলিশ সুপার, পিবিআই গাজীপুর জেলা এর হাওলা মতে পিবিআই গাজীপুর জেলায় কর্মরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার.বিপিএম(বার) ,পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব মোঃ জামাল উদ্দিন তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটন করেন।

গ্রেফতার কৃত আসামীরা যথাক্রমে, মোঃ জিয়াউর রহমান @ সুমন (৪৫), পিতা-মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, মাতা-রহিমা খাতুন, সাং-পালোহাটি, থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহকে গত মঙ্গলবার ২৬ জুলাই রাত ১ টা ৪৫ মিনিটের সময় ময়মনসিংহ কোতায়ালী থানাধীন মাসকান্দা এলাকা থেকে,আসামী মোঃ আমির হোসেন ফকির (৩৩), পিতা-মোঃ আয়নাল ফকির, মাতা-নাজমা বেগম, সাং-রাউৎভোগ, থানা-টংগীবাড়ী, জেলা-মুন্সিগঞ্জ গত মঙ্গলবার ২৬ জুলাই, রাত ১ টা ৩৫ মিনিটের সময় টংগীবাড়ী থানাধীন রাউৎভোগ গ্রামস্থ তার নিজ বাড়ী হতে এবং আসামী মোঃ কামরুল হাসান সবুজ (৩৮), পিতা-মৃত ইয়াসিন আলী, মাতা-মোছাঃ পারুল আক্তার, সাং-আমিরাবাড়ী, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ, এ/পি-সাং-মালখানাগর চৌরাস্তা (জামাল এর ভাড়াটিয়া), থানা-সিরাজদিখান, জেলা-মুন্সিগঞ্জকে গত মঙ্গলবার ২৬ জুলাই, রাত ৩ টা ৫০ মিনিটের সময় সিরাজদিখান থানাধীন মালখানাগর চৌরাস্তা আসামীর ভাড়াটিয়া বাড়ী হতে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হোতাপাড়াস্থ বৈশাখী আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন মেয়েদেরকে এনে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করত।

গ্রেফতার কৃত আসামী মোঃ জিয়াউর রহমান ওরফে সুমন, মোঃ আমির হোসেন ও মোঃ কামরুল হাসান সবুজ এবং তাদের সহযোগী আসামীরা ঘটনার দিন অজ্ঞাতনামা মহিলা ভিকটিমকে উক্ত হোটেলের ২০৪ নম্বর রুমে রেখে বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক করায়। পরবর্তীতে রাত অনুমান ১০ টার সময় গ্রেফতারকৃত আসামী সহ তাদের সহযোগী আসামীরা মেয়েটির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব করলে মেয়েটি প্রত্যাখান করে এবং আসামীগন মেয়েটির সাথে জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করলে মেয়েটি বাধা প্রদান করে। এরপর আসামীগন মেয়েটিকে উক্ত হোটেলের ২০৪ নম্বর রুমে খাটের উপরে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশটি খাটের নিচে রেখে দেয়।

পরবর্তীতে উক্ত আবাসিক হোটেলের মালিক মোঃ ইকবাল হোসেন (৩৫),পিতা মৃত সামসুল হক,মাতা- মৃত ছাহেরুন নেছা,সাং-পাউপাদিয়া,থানা-সিরাজদিখান,জেলা- মুন্সিগঞ্জকে আসামীগন ফোনে জানালে তিনি বলেন যে, মেয়েটির লাশ একটি ড্রামের ভিতর ভরে হোটেলের পিছনে খালি জায়গায় মাটির নিচে পুঁতে রাখার জন্য বলে।

তখন আসামীগন হোটেলের মালিক মোঃ ইকবাল হোসেনের নির্দেশে লাশটি ড্রামে ভরে হোটেলের পিছনে পুঁতে রাখার জন্য নিয়ে গেলে লোকজন থাকায় উক্ত স্থানে লাশটি পুঁতে রাখতে না পারায় লাশটি নিয়ে পূনরায় হোটেলের স্টোর রুমের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, এটি একটি হত্যাকান্ড। মূলত বৈশাখী আবাসিক হোটেলে মেয়েদের নিয়ে এসে অনৈতিক কাজ করত এবং হোটেল কর্মচারীরা হোটেলে আসা মেয়ের সাথে জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করত। জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করতে গিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা জের ধরে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীগন অজ্ঞাতনামা মহিলা হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকার করে। এরপর গ্রেফতার কৃত আসামীদের ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্কীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের নিমিত্তে আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামীরা নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা মহিলা হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্কীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *