মাফিয়া ডন শামীমের ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় রাজধানী রাজনীতি

যুবলীগ নেতা শামীমের অফিসে মাদক ও টাকার স্তূপ

বিশেষ প্রতিবেদক : সাত দেহরক্ষীসহ আটক হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। এর আগে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর জি কে শামীম নাম উঠে আসে। তিনি অস্ত্রধারী দেহরক্ষী বেষ্টিত হয়ে সব সময় চলাফেরা করতেন।
অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার নামে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) ও ডলার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কিছু মাদকও উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে এই জি কে শামীম।
ছোটখাটো মানুষ হলেও শামীমের ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এ শামীম ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি।
একসময়ের যুবদল নেতা ক্ষমতার পরিবর্তনে হয়ে যান যুবলীগ নেতা। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও তিনি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো।
বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাদের আর গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালিয়েছিলেন শামীম।
নিম্ম মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। বনানীর ডিওএইচএসে বিলাশবহুল বাড়িতে থাকেন শামীম। আর গুলশান নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন শামীম। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি।
সাধারণ জনগণের কাছে অতেটা পরিচিতি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিতি পান শামীম। সেই নির্বাচনে শামীম আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন।
তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলছেন ভিন্ন কথা। যুবলীগের নন, জি কে শামীম যুবদলের সাবেক সহ-সম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুবলীগে শামীমের কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়ান। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তাকে কয়েকবার এমন মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলাও হয়েছে।
বাবলু আরও দাবি করেন, জিকে শামীম এক সময় যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বলে শুনেছি।
বাসাবো ও এজিবি কলোনির কয়েকজন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ওয়ার্ড যুবদলের মাধ্যমেই রাজনীতি শুরু করেন শামীম। পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদ হাতিয়ে নেন।
সে সময় বিএনপির বড় বড় নেতাদের ছবিসহ সবুজবাগ-বাসাবো এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার শোভা পেত বলে জানান এজিবি কলোনির বাসিন্দারা। বিএনপির নেতাতাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন তার দখলে ছিল।
এ সময় শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হয়ে ওঠেন। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে শামীম যুবলীগে ভিড়েন। টাকা ও প্রভাব খাটিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। বর্তমান তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা।
এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসহ শামীমের পোস্টার-ব্যানার ঝুলছে। ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও শামীমের ভাগ্যে সুপ্রসন্নই থেকে গেছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে যেভাবে দাপটের সঙ্গে গণপূর্তে ঠিকাদারি ব্যবসায় একক আধিপত্য ছিল তার, আওয়ামী সরকারের আমলেও একইভাবে রাজত্ব করে যাচ্ছেন এই যুবলীগ নেতা। ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী সবসময় ঘিরে থাকত শামীমকে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তার বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন অনেকে।


বিজ্ঞাপন

যুবলীগ নেতা শামীমের অফিসে মাদক ও টাকার স্তূপ : যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে শামীমকে আটক করেছে র‌্যাব। রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার অফিস থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা ও মাদক জব্দ করা হয়।
শুক্রবার দুপুর ২টার শামীমকে আটক করা হয়। এর আগে বেলা ১২টা থেকে তার অফিসটি ঘিরে রাখে র‌্যাব সদস্যরা। এর পর ভেতরে অভিযান চালায় তারা।
র‌্যাবের মুখপাত্র সারোয়ার বিন কাশেম জানান, জিকে শামীমের নিকেতনের অফিস থেকে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার এফডিআর নথি জব্দ করা হয়। এছাড়া ৭টি অস্ত্র, মার্কিন ডলার, নগদ ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার ভোরে সুনির্দিষ্ট অভিযাগে অস্ত্রসহ শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষী আটক করা হয়েছে। জিকে শামীমের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *