বিশেষ প্রতিবেদক : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঘোষণা দিয়ে রাজধানীর পাঁচটি স্থানে স্বল্প পরিসরে ট্রাকে করে পেয়াঁজ বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে দিনের অধিকাংশ সময় পেয়াঁজের ট্রাকের দেখা পাচ্ছেন না ক্রেতারা। ফলে টিসিবির পেয়াঁজ বিক্রির কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে এর দাম। রোববার রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে প্রতি কেজি পেয়াঁজের দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের কয়েকটি প্রদেশে ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারেণে একবার পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। এ জন্য দেশটি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ভারতের পেঁয়াজের বড় একটি বাজার হলো বাংলাদেশ। ফলে উভয় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে ভারতের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত নতুন পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে আসেনি। ব্যবসায়ীরা মজুদ করা পেঁয়াজই বেশি দামে বিক্রি করছে। পাশাপাশি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী কিছু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে স্বল্প পরিসরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব, দিলকুশা বক চত্বর, খামারবাড়ি, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায় খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। তবে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। পাঁচটি ট্রাকে করে প্রতিদিন পাঁচ হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রির কথা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্পটে ট্রাকের দেখা পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনকে ফোন করলেও তার কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ন কবির বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানের পাঁচটি স্পটে পাঁচটি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি পেয়াঁজের দাম রাখা হয়েছে ৪৫ টাকা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। প্রতিটি ট্রাকে ১ হাজার কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাকগুলো পেঁয়াজ মজুদ করে সকাল নয়টা থেকে পণ্যটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত স্পটে থাকছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসছে সপ্তাহ থেকে ট্রাকে করে আরও বেশি পেঁয়াজ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। কোথাও ট্রাক চোখে পড়ছে না- এর জবাবে তিনি বলেন, চোখে না পড়ার কারণ হলো, প্রেসক্লাব ও সচিবালয় এলাকায় দুটি ট্রাক প্রতিদিন দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে। অন্য তিনটি ট্রাকে এক জায়গা না থেকে ঘুরে ঘুরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। তবে প্রেসক্লাবে শনিবার কোনো ট্রাকের আসেনি- এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বিক্রি শেষ হয়ে গেলে ট্রাক সেখানে অপেক্ষা করে না, চলে যায়।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ কিছুটা কমে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মতিঝিল ও খিলগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারগুলোতে প্রতিপাল্লা (৫ কেজি এক পাল্লা) দেশি পেঁয়াজ ৪৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তবে কোনো ক্রেতা যদি ৫ কেজির কম পেঁয়াজ কিনতে চায় তবে তাকে খুচরা মূল্যে কিনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
সূত্র জানায়, ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে করে ভারত সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারন করে দিয়েছে। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার থাকলেও গত ১৩ সেপ্টেম্বর তা বাড়িয়ে ৮৫০ মার্কিন ডলার পুননির্ধারণ করেছে ভারত। যদিও ১৩ সেপ্টেম্বরের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে নতুন পেঁয়াজ আসেনি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে প্রায় ৫০ টাকা। অথচ তাদের এই পেঁয়াজ আগের দামে কেনা।
সূত্র জানায়, বর্তমান প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৩.৭৬ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়াও আমদানি হয়েছে ১০ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন সচিবালয়ে এক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে, বন্দরগুলো থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এবং পেঁয়াজ পরিবহন নির্বিঘœ করতে আইজিপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভোমড়া, সোনা মসজিদ, হিলি ও বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত খালাসের প্রক্রিয়াও চলছে। আর মিয়ানমার ও মিশর থেকেও পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। তারপরও বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম।