প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো

Uncategorized অন্যান্য



সামরিক বিশ্লেষক ঃ বর্তমানে সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ভবিষ্যতের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নিবীড় গবেষণায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে।

আর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণার খাতে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই। মনে করা হয় ২০২০-২১ সালে মার্কিন প্রশাসন সারা দেশের বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে এবং সামরিক বাহিনীর রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট সেন্টারে আনুমানিক ২৪০ থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। তবে প্রদত্ত আর্থিক হিসাবটি যুক্তি সঙ্গতভাবেই কম বা বেশি হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রিসার্চ এন্ড ডেভপমেন্ট খাতে ব্যয় করছে রেড জায়ান্ট চীন। তাদের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় ঠিক কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব নয় বা চীন সরকার এ সংক্রান্ত কোন তথ্য উপাত্ত বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে না। তবে অনুমান করা যায় যে, উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীন কিন্তু রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট খাতে প্রতি বছর গড়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে।

এ খাতে চীনের শি জিং পিং সরকার দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনোলজিক্যাল ইনিস্টিটিউট গুলোতে বড় ধরণের তহবিল বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

তাছাড়া জাপানের ফুমিও কিশিদা সরকার দেশের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় নতুন করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাপানের ‘আন্তর্জাতিক প্রি-এমিনেন্সের রিসার্চ স্কুল’ হিসাবে স্বীকৃত একেবারে সীমিত সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক ও নিবিড় গবেষনা ও দেশের প্রয়োজনে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের স্বার্থে অর্থিক সহায়তা জন্য প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের তহবিল গঠন করার পরিকল্পনা করেছে৷ যে প্রক্রিয়া চলতি ২০২২-২৩ সাল থেকেই শুরু করতে পারে।

ভবিষ্যতের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইসরাইল ও সিঙ্গাপুরের মতো একেবারে ছোট্ট দেশও কিন্তু বসে নেই।

তারাও কিন্তু তাদের টেকনোলজিক্যাল ইনিস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারগুলোতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছে। মনে করা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামস্যাং, এলজি, হুন্দাই রটেমের মতো বিশ্ব বিখ্যাত কর্পোরেশনগুলো প্রতি বছর এ খাতে সরাকারের পাশাপাশি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। আর বিশ্বের ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি শিল্পে তাইওয়ানের অনবদ্য ভূমিকা বা অবদান সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর সেমিকন্ডাক্টর বা মাইক্রো ও ন্যানো চিপ শিল্পের ৬০% একাই নিয়ন্ত্রণ করে ছোট্ট এই দেশ তাইওয়ান। এদিকে ইসরাইলের নিজস্ব নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও গবেষোণা দেখলে যে কেউ চমকে যেতে পারে।

এদিকে ভারত তার নিজস্ব প্রযুক্তি নির্ভর বেশকিছু গবেষণামুলক বা রিসার্চ সেন্টার গড়ে তুললেও এ খাতে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের মতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে না।

অন্যদিকে দেশটিতে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী প্রযুক্তিবিদ ও বিশ্ব মানের গবেষক তৈরি হলেও তার মূল সুবিধাভোগী কিন্তু ভারত নয়। বরং এই মেধাবীদের একটি বড় অংশই আমেরিকা ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলো টেনে নেয়।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে যতটা অগ্রসর বলে মনে করা হয় বাস্তবে যুক্তরাজ্য, জার্মান, নেদারল্যান্ডস, ইতালিসহ কিছু দেশ ব্যাতিত অন্যান্য দেশগুলো কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণায় কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণায় মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর অবস্থান খুবই হতাশাজনক বলা চলে।

এক্ষেত্রে কিছু কিছু সেক্টরে তুরস্ক এবং ইরান ছাড়া আর কোন দেশের নামই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অবশ্য অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং নিবিড় গবেষণামুলক কার্যক্রম নিজের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছে।

অত্যন্ত হতাশাজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়নে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর অবদান এবং অংশীদারত্বমুলক অংশগ্রহণ একেবারেই নেই বললেই চলে।

সারা বিশ্বে ১.৮ বিলিয়নের বিশাল জনসংখ্যার ৬০টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থাকলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এ দেশগুলো আজ অব্ধি নিজের কোন যোগ্য স্থান করে নিতে পারেনি।
তাই নতুন নতুন সিস্টেম উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি বিবেচনা করলে, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর অবদান এবং সক্ষমতা একেবারে মাত্র ৫% থেকে ৮% এর বেশি হওয়ার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

যদিও অতি সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যেমন তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির একাধিক সেক্টরে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও তুরস্ক বাদে অন্যান্য দেশগুলোতে থাকা টেকনোলজিক্যাল ইনিস্টিটিউট এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বড় ধরণের ফান্ড বরাদ্দ কিংবা বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যায়ের বিষয়টি খুব একটা নজরে আসে না।
তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিবিড় গবেষণায় প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় না করায় তারা কিন্তু এখনো পর্যন্ত পিছনে পড়ে রয়েছে।

ছবিঃ- সাউথ কোরিয়ান ১২০ মিঃমি সেল্ফ প্রপেল্ড মর্টার।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *