অনেক কিছুই ঘটতে পারে, এই সরকার থাকবে না

রাজধানী রাজনীতি

নিজম্ব প্রতিবেদক : একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির আগে অনেক কিছুই ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের আগে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। হয়তো এই সরকার থাকবে না। আমরা যা প্লান করি আর আল্লাহ কি চান সেটা দেখাতে পারব না।
শনিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ৩০ ডিসেম্বরের বড় আকারে সমাবেশের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেটা অনেক বড় আকারে হবে। তবে তার আগে অনেক কিছু ঘটতে পারে। হয়তো এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। আমরা যা প্লান করি আর আল্লাহ কি চান সেটা দেখাতে পারব না। সুতরাং সেটার অনেক সময় আছে। সেটা নিয়ে এখন কিছু ভাবছি না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তি সই করেছেন তার ওপরে আমাদের কোনো ভরসা নেই।
রেজা কিবারিয়া বলেন, এই সরকারের ওপর আমাদের যেমন ভরসা নেই তেমিন দেশের মানুষেরও কোনো ভরসা নাই। দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার মতো এই সরকারের দক্ষতা আছে কিনা বা ইচ্ছা আছে কি না সেটা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।
ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, চুক্তির পুরো বিষয়টা আমাদের জানা নেই। পানি বন্টনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো না জেনে বলা যাবে না। এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। সাধারণভাবে বলতে চাই বর্তমান সরকার দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। পররাষ্ট্রনীতিতে পুরোনো রোহিঙ্গা সমস্যা রয়েছে, পানি পাওয়ার ব্যাপারে, ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্রানজিট বিষয়ে তারা ব্যর্থ। দেশের মাটিতে যেমন তারা ব্যর্থ, পররাষ্ট্রনীতিতেও তাদের ব্যর্থতা দেখা যায়।
শিগগিরই দেশে আরেকটা নির্বাচন হবে বলে সম্প্রতি বলেছিলেন রেজা কিবরিয়া। কিসের ভিত্তিতে একথা বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক বলেন, একজাক্টলি ওভাবে আমি বলিনি। এই সরকারের প্রত্যেক খাতে যে ব্যর্থতা তাতে মোটামুটিভাবে রাষ্ট্র কলাপসের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাত, বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে তারা হিমশিম খায়, তারা শুধু মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করছে। ব্যাংকের অবস্থা তো সবাই জানেন। তারা প্রত্যেক ক্ষেত্রে যে ফেইল করছে, সেটা দেশের মানুষ আগে টের পায়নি, এখন তারা বুঝে গেছে যে এরা অদক্ষ এবং ব্যর্থ। আমার ধারণা যে হয়তো কোনো আন্দোলনের জন্য না, তাদের ব্যর্থতার জন্য তারাই ক্ষমতা ছেড়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে মানুষকে সন্তষ্ট করতে চেষ্টা করবে। আমার এখনও ধারণা সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে। কিন্তু যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবে আমি বলিনি। তবে আমার ধারণা এটা হতেই হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করে একটা শক্তিমান সরকার যে সরকারের জনসমর্থন আছে সেই সরকার বাংলাদেশে একদিন হবে। তাতে বেশি দেরি হবে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা কি? নির্বাচনের আগের মতো ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলন হবে কি না জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, নির্বাচনের আগে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক আর একজন ছিলেন। উনি ওনার মতো কাজ করেছেন। আমি আমার মতো করছি। ঠিক আগের মতো তো হবে না। আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। এখনও বলতে পারব না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সবাই একই পথে আছি। এই ব্যর্থ সরকারকে সরানোর ব্যাপারে আমাদের কারও দ্বিমত নাই।
দলের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে দলের দলটির নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বৈঠকে মূলত গণফোরামের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। বলতে পারেন আমরা সাংগঠনিক কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
বৈঠকের ব্যাপারে রেজা কিবরিয়া বলেন, দুর্নীতি দমনের অভিযান নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন নেতা ধরলেই আমরা উৎফুল্লু হয়ে যাব এটা যেন সরকার না ভাবে। তারা প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় স্তরের নেতাদের যখন ধরতে শুরু করবে, যারা ব্যাংক-শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। যারা বিলিয়নস অব ডলার বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে যখন অ্যাকশন নেবে তখন আমরা স্বাগত জানাব।
এর আগে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম বৈঠক হয়। বৈঠকে নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, মোহসিন রশীদ, মোকাব্বির খান এমপি, জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও মেজর (অব.) আমিন আফসারি উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *