প্রধান বিচারপতির পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট পরিচয়ে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক ব্রাহ্মণ্বাড়িয়ার সেন্টু দেবনাথ কে গ্রেফতার করেছে সিআইডি’র সাইবার টিম

Uncategorized আইন ও আদালত



নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সেন্টু দেবনাথ। পড়ালেখা করেছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় বাড়ি তার। মি. পলক এম, নামে ফেসবুক আইডিতে সে প্রধান বিচারপতির পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। বন্ধুদের নজর কাড়তে সুপ্রিম কোর্টের নিত্য নতুন বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিয়মিত আপডেট ফেসবুকে পোস্ট করে সে। ফেসবুকে তার বন্ধুর সংখ্যাও ৫ হাজার। বেশিরভাগই মেয়ে বন্ধু তার। অনলাইন বন্ধুত্বে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ট হতে বেশ পারঙ্গম সে। সুপ্রিম কোর্টের মামলার ব্যাপারে সাহায্য সহযোগিতার কথা বলে অনেকের কাছ ত্রাতা হিসাবে আবির্ভূত হন। পরে সুযোগ বুঝে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে একসময় তাদেরকে ব্লক করে দেয়।

সম্প্রতি ঢাকায় বসবাসরত এক তরুনী ফেসবুক মেসেঞ্জারে এই প্রতারকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে খুইয়েছেন সাড়ে সতের লাখ টাকা। ওই প্রতারক দীর্ঘ দিন তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। ওই তরুণী তাকে বিশ্বাস করে ভাইয়া বলে সম্বোধন করতেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর সেন্টু দেবনাথ মেসেঞ্জারে ব্লক করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। প্রতারিত ওই তরুণীর জবানিতেই জানা গেল ঘটনাটি। তিনি হুবহু যা বললেন:
মেসেঞ্জারে সালাম দিয়ে মেসেজ পাঠায় সেন্টু। এসময় আমি সাড়া না দিলে উনি লিখেন, আমি তোমার বড় ভাইয়ের বয়সী। আমাকে একসেপ্ট করতে সমস্যা কোথায়। তখন তাকে ফেসবুকে যুক্ত করি আমি। এসময় সেন্টু জানতে চায়, আমি কি করি কোথায় থাকি, বিয়ে করছি কি না ইত্যাদি। আমার আগ্রহের জায়গা থেকে আমি তার প্রোফাইলে যাই। প্রোফাইলের নিচে লেখা, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে সে। বিচারালয় নিয়ে মামলা সংক্রান্তে কথা বলে প্রায়ই। সহজ কথা! প্রধান বিচারপতির পিএ সে। আইডি কার্ড দেখায়। কারুর এ ব্যাপারে সাহায্য লাগলে কিংবা কোন চাকুরী নিয়োগে কাজ থাকলে জানাতে বলে। চলতে থাকে আমাদের নিয়মিত কথাবার্তা। সে আমাকে তার নিজের মেয়ের মত খোঁজখবর নিতে থাকে। ঘুম থেকে কখন উঠেছি, খেয়েছি কি না, অফিসে গিয়েছি কি না, আমার বিয়ের জন্য ভাল পাত্র দেখাসহ খুঁটিনাটি সব বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে শুরু করে। এক সময় দেখি সে আমার বড় ভাইয়ের স্থান পুরোপুরি দখল করে ফেলেছে।

দিনে দিনে সে আমার কতটা আপন হয়ে উঠেছে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এসময় তার জন্য খুব মায়া তৈরি হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার বিষয়ে আলাপ করলে বাবা শুরুতেই বুঝতে পারেন লোকটি প্রতারক প্রকৃতির। মা যদিও আমার পক্ষে সাফাই গাইতেন। তার সঙ্গে আমার নিয়মিত মেসেঞ্জারে কথা হত।

২০২১ সালের জুলাই মাসের ২৮ তারিখ আমি বাড়ি যাই। বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সে আমাকে মেসেঞ্জারে বলেন, ‘তোমার জন্য সুখবর আছে। এখানে তোমার চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেছে’। ভাবতেই পারছিলামনা তিন মাসের ভেতরে এতকিছু ঘটে গেছে। তোমার সরকারী বাসাও বরাদ্দ হয়ে গেছে , তারজন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বলে কয়ে এই কম টাকায় করেছি। কথামত বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিই।এর আগে আমার দু রিলেটিভের প্রাইমারী স্কুলে চাকুরীর জন্য নয় লাখ টাকা দিই। আমার বোনের বিল্ডিং এর রাজউকের পারমিশনের কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। সর্বমোট সতের লাখ টাকা নেয় আমার কাছ থেকে। নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে আমার, আমি তাকে কোনদিন দেখিই নি অথচ দুজন লোকের মাধ্যমে তের লাখ টাকা নিল। আবার বিকাশেও কতগুলো টাকা দিলাম অন্ধের মত। আমি এই নিমুকহারামীর ফাঁসি চাই!

আমাদের কথাঃ
ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার জগৎ এখন অপরাধের আখড়া। বিশেষ করে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কেন্দ্রিক নানা অপরাধ-প্রতারণা ঘটে চলছে অহরহ। যদিও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন ফেসবুক। মনের কথা, অভিব্যক্তি নিমিষেই পৌঁছে যায় শত শত বন্ধুর কাছে। এ ফেসবুকই একদিকে যেমন বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট করছে, তেমনি একে ব্যবহার করে কেউ কেউ স্বার্থ হাসিল করছে। প্রতারণার অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছে ফেসবুককে। সামান্য অসাবধানতার কারণে এর ব্যবহারকারী প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ পড়ছেন মারাত্মক হয়রানিতে।

সেন্টুকে সিআইডি সাইবার টীম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে গ্রেফতার করেছে। তার অপরাধ জগতের সব কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছে। ডিজিটাল আলামত থাকায় তার কমপক্ষে পাঁচ বছর সাজা হবে। প্রতারক শ্রেণীর সকল সেন্টুকে সিআইডি কিংবা বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সবসময় এভাবে পাকড়াও করতে পারেনা এবং ইহা সম্ভবও না।
সেন্টুদের এমন ধরনের প্রতারণার কাজ নিমিষেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে যদি আমরা সকলেই সজাগ সচেতন এবং সতর্ক হই। (তথ্য সুত্রঃ- মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ, বিশেষ পুলিশ সুপার সিআইডি এর টাইম লাইন থেকে নেওয়া )


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *