বামপন্থী সংগঠন করায় ঢাবির এক শিক্ষার্থীকে রাতভর হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

Uncategorized অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ ছাত্রলীগ না করে বামপন্থী সংগঠন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে রাতভর হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ‌‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের সদস্য এবং ‘সরকার–বিরোধী’ বলেও আখ্যা দেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২২৩ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহমদ উল্লাহ আশরাফ ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রেজভী হাসান। তারা হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুনের অনুসারী। আজহারুল ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির সাদিক লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।হল প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির সাদিক বলেন, গতকাল (সোমবার) রাত ১টায় আহমদুল্লাহ আশরাফ ও রেজভী হাসান কক্ষে ঢুকে আমার বইপত্র, ফোন তল্লাশি শুরু করে এবং আমার কাছে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রস্তাব, ছাত্র ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য বই পেয়ে তারা সারারাত ধরে মানসিকভাবে অত্যাচার করেন এবং মারধরের হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমার বাবা-মাকে ফোন দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে বলে অন্যথায় তারা আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। যা আমার বাবা-মাকেও সারারাত দুশ্চিন্তার মধ্যে রাখে।তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মা-বাবা আজ সকালে ঢাকায় এসেছেন। তারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, আমি নিজেও আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে, আমাকে এবং আমার বাবা-মাকে যে মানসিক নির্যাতন করেছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই এবং হলে আমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আহমাদুল্লাহ আশরাফের কাছে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন বলেন, যে দুইজনের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তারা দুইজনই তার রুমমেট, এখানে হল ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার কাছে ইসলামি বই এবং বাম সংগঠনের বই দেখে শুধুমাত্র জানতে চেয়েছে। তাকে কেউ নির্যাতনও করেনি, হল থেকে বেরও করেনি। বাবা-মাকে ডেকে আনার যে অভিযোগ সেটাও মিথ্যা। ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় বিশ্বাস করি এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছাত্র রাজনীতি করে তাদের সবার সঙ্গে আমাদের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করি। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হলে এটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বিষয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকে হয়রানির নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি সামিরকে মানসিক নির্যাতনকারী বড় ভাইদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ও হলে সামিরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১ম বর্ষ থেকে বৈধ সিট নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *