অস্তিত্বহীন সিএনজি স্টেশন ডিএসসিসির অর্থ লোপাট!

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছে না সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থ লোপাটে তুঘলকি কা- ঘটিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অস্তিত্বহীন সিএনজি গ্যাস স্টেশনের নাম দিয়ে ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৬ টাকা খরচ দেখিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। খরচের সঠিক কাগজপত্র দাখিল করতেই ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটি।
এ রকম মহা জালিয়াতি ধরা পড়েছে অডিট বিভাগের কাছে। অডিট অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১-১২ সালের হিসাব নিরীক্ষায় পরিবহন বিভাগের জ্বালানি বিল ভাউচার ও লগ বই যাচাই করে লক্ষ্য করা গেছে ‘মেসার্স গোমতি ফিলিং স্টেশন এন্ড সার্ভিস সেন্টার লি. যাত্রাবাড়ী ঢাকা’ এই নামের সিএনজি স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ির জন্য গ্যাস (সিএনজি) ক্রয় দেখিয়ে ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৬টি টাকা পরিশোধ দেখিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু, ঢাকায় এই নামে কোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অস্তিত্ব নেই। এতে পুরো টাকাই সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট আপত্তির মুখে পরে অবশ্য কিছু টাকা নিষ্পত্তি করে ডিএসসিসি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি একটি খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েছে-যাতে বলা হয়েছে করপোরেশনের নিজস্ব পেট্রোল পাম্পটি ‘জে আর ট্রেডিং লিমিটেডকে’ ইজারা দেওয়া হয়েছে। উক্ত পাম্পটিতে কোনো সিএনজি ফিলিং মেশিন নেই। ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইস্যুকৃত জ্বালানি স্লিপের বিপরীতে নির্ধারিত দামে সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালকদের নগদ অর্থ প্রদান করে থাকে। এরজন্য ইজারা প্রতিষ্ঠানকে কোন অতিরিক্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে চালকগণ নিকটবর্তী সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে থাকে।
সরকারের আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় ২০১৩ সালের ১০ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি প্রতিবেদন দেয় সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ। পরবর্তীতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল তাগিদপত্র এবং সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৩ সালের ২৩ জুন সচিব বরাবর আধা সরকারি পত্র জারি করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিষয়টির কোন নিষ্পত্তি হয়নি।
নিরীক্ষা অধিদফতরকে ডিএসসিসি জানিয়েছে, গাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অফিস কার্যালয়, নগর ভবনের কার পার্কিং, আউটফল মোটর গ্যারেজ, যান্ত্রিকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে গাড়ি রাতের বেলায় রাখা হয়। কোন কোন গাড়ি পাকিং অবস্থান বেশি দূরত্বে থাকায় উক্ত গাড়ির বিপরীতে সরকার নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী ইস্যুকৃত গ্যাস সংগ্রহ করতে যাওয়া আসায় উক্ত সিএনজি খরচ হয়ে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট চালকরা নিকটবর্তী সিএনজি স্টেশন গ্যাস সংগ্রহ করে থাকে। যেহেতু ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে কোন লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে না এবং মাসান্তে বিল প্রদান করা হয়ে থাকে সেহেতু এক্ষেত্রে করপোরেশনের কোন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদফতর এর স্মারক নং ৪৩৭৯/এলজি-৩ নি:প্র:/২০১৩-১৪/৫৭২ এ ২ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার ২০ টাকার অডিট নিষ্পত্তি করা হয়। তারপরও ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৬ টাকা এখনও গরমিল।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র উত্থাপিত হয়। নথি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বিষয়টা অবাক লেগেছে। সিএনজি স্টেশন নেই তারপরও সেই সিএনজি স্টেশনের নামে বিল ভাউচার। আমরা অধিকতর তদন্তের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ডিএসসিসি’র পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) নিতাই চন্দ্র সেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ একটি অডিট উঠেছিল সে অনেক আগে। তবে আমার জানামতে সেই অডিটের কিছুটা টাকা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। তবে সংসদীয় কমিটিতে কি হয়েছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *