ডিএনসি’র ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) এর মাদক বিরোধী সাড়াশি অভিযানে কোটি টাকার ২৫০ গ্রাম ভয়ংকর মাদক কোকেন সহ ৫ জন গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ‘মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজলের সার্বিক নির্দেশনায় এবং ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) এর সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ ও সূত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার খিলক্ষেতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মাদক বিরোধী বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে।

উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে খিলক্ষেত থানাধীন বাজার বেপারী পাড়া রোড থেকে কোটি টাকা মূল্যের ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) গ্রাম ভয়ংকর মাদক কোকেন (Cocaine) উদ্ধার সহ চট্টগ্রাম ভিত্তিক মাদক পাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য কে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানের সময় ও ঘটনাস্থলঃ সোমবার ৭ নভেম্বর, সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টার সময় খিলক্ষেত বাজার বেপারী পাড়া রোড, খিলক্ষেত থানা, ঢাকা।

যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়ঃ ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) সাম্প্রতিককালে অভিজাত এলাকায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের উৎস অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইতোপূর্বে এলএসডি-আইস সহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে। গত মাসে একটি কোকেন পাচারকারী চক্রের সন্ধান পাওয়া গেলে, গোপন সংবাদদাতা নিয়োগ করে ক্রেতা সেজে চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।

তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে এই মাদক পাচার চক্রের ৫ (পাঁচ) সদস্য কোকেন বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রাইভেট কারযোগে খিলক্ষেত এলাকায় পৌঁছালে কোকেন সহ গ্রেপ্তার করা হয়।

জব্দকৃত আলামত সমুহ যথাক্রমে, ১০টি জিপারযুক্ত স্বচ্ছ পলি প্যাকেটে রক্ষিত সাদা বর্ণের ‘ক’ শ্রেনীর মাদকদ্রব্য কোকেন (Cocaine), প্রতি প্যাকেটে ২৫ গ্রাম করে সর্বমোট ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) গ্রাম, চট্র মেট্রো-গ ১৩-৭৭৩৩ নাম্বারধারী টয়োটা ফিল্ডার নামীয় সিলভার রংয়ের প্রাইভেট কার ১টি। আসামীদের ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন।

আসামীদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মিন্টু কর্মকার (৩৪), পিতাঃ সুনীল কর্মকার, মাতাঃ উষা কর্মকার, পেশাঃ মোবাইল সার্ভিসিং দোকানের মালিক,
ঠিকানাঃ পশ্চিম ধলই (কৃষ্ণ বাবুর বাড়ী), পোস্টঃ কাটির হাট, থানাঃ হাটহাজারী, জেলাঃ চট্টগ্রাম। এজাহার মিয়া (৩৮), পিতাঃ মৃত আব্দুল শুক্কুর, মাতাঃ নুর বানু, পেশাঃ মাছের ঘেরের মালিক, ঠিকানাঃ সুয়াবিল (নুরুল ইসলাম তালুকদার বাড়ী), পোস্টঃ বৈদ্যেরহাট, নাজিরহাট পৌরসভা, থানাঃ ভুজপুর, জেলাঃ চট্টগ্রাম। মোঃ নাজিম উদ্দীন ওরফে মুন্না (৪০), পিতাঃ মৃত বদিউল আলম, মাতাঃ নুর নাহার বেগম, পেশাঃ ফলের ব্যবসা, ঠিকানাঃ ধলই (খলিল চৌধুরী বাড়ী), পোস্টঃ এনায়েতপুর, থানাঃ হাটহাজারী, জেলা- চট্টগ্রাম। মোঃ নাজিম উদ্দীন (৪৫), পিতাঃ মৃত কবির আহম্মদ, মাতাঃ নুর জাহান বেগম, পেশাঃ ফলের দোকানের কর্মচারী, ঠিকানাঃ পূর্ব ফরহাদাবাদ (সিরাজ বাড়ী), পোস্টঃ নাজিরহাট, নাজিরহাট পৌরসভা, থানাঃ ফটিকছড়ি, জেলাঃ চট্টগ্রাম। মোহাম্মদ মামুন (২৭), পিতাঃ মোঃ রফিক, মাতাঃ নুর ভানু, পেশাঃ গাড়িচালক,
ঠিকানাঃ পূর্ব ফরহাদাবাদ (ছমদ বাড়ী), পোস্টঃ নাজিরহাট, নাজিরহাট পৌরসভা, থানাঃ ফটিকছড়ি, জেলাঃ চট্টগ্রাম।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) (পলাতক), পিতাঃ মৃত আবদুল মালেক, মাতাঃ মোছাম্মৎ মাবিয়া বেগম, পেশাঃ গাড়িচালক,ঠিকানা ধলই (বাচা মিয়া টেন্ডল বাড়ী), পোস্টঃ কাটির হাট, থানাঃ হাটহাজারী, জেলাঃ চট্রগ্রাম।

জব্দকৃত কোকেনের উৎস ও সম্ভাব্য গন্তব্যস্থলঃ আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কক্সবাজারে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত পলাতক আসামী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) গভীর সমূদ্রে চলাচলকারী ট্রলার থেকে এই মাদক সংগ্রহ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পাচার করার প্রচেষ্টা করছিল। এই লক্ষ্যে তার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতদের নিয়ে সে একটি চক্র গড়ে তোলে।

ইতোপূর্বে ইয়াবার চোরাচালানে যুক্ত থাকলেও লোভের বশে অতিমূল্যের এই মাদক চোরাচালানে যুক্ত হয়েছে বলে জানা যায়।

উদ্ধারকৃত কোকেন এর মূল্যঃ
আন্তর্জাতিক কালোবাজারি বিষয়ক তথ্য সংগ্রাহক ওয়েবসাইট ‘হ্যাভকস্কোপ’ এর তথ্যমতে প্রতি কেজি কোকেনের মূল্য আনুমানিক ১৯০-৩৩০ ডলার।
বাংলাদেশে পাচারকারীদের পর্যায়ে প্রতি গ্রামের মূল্য ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে জব্দকৃত আলামতের মূল্য প্রায় ১(এক) কোটি টাকা।

গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর ৩৬ (১) এর সারণি ৮(গ), ৩৮ ও ৪১ ধারায় খিলক্ষেত থানায় নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।
এই অপরাধের সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্যদের আটক করতে অভিযান চলমান আছে।

মানব দেহে কোকেন এর প্রভাব সমুহ যথাক্রমে উল্লেখ করা হলোঃ সারা বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ও ভয়ংকর অবৈধ মাদক কোকেন। এ মাদকের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে, এরপরেই আছে ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা।

১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক আইনে কোকেন সেবন অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কোকেন সাধারণত পাইপের সাহায্যে নাক দিয়ে টেনে নেয়া হয়, পাত্রে রেখে তাপ দিয়ে বাষ্প গ্রহণ করা হয় অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে ধমনীতে নেয়া হয়।

চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী কোকেনের ব্যবহার খুব সীমিত। অঙ্গ-প্রতঙ্গের অসাড়তা দূর করতে এবং নাকের অপারেশনের সময় রক্ত পড়া বন্ধ করতে সামান্য পরিমাণ কোকেন ব্যবহৃত হয়।
কোকেন সেবনে নিম্নলিখিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ঃ যেমন, খিঁচুনি, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক, যৌনক্ষমতা কমে যাওয়া, ফুসফুসের ক্ষতি, এইচআইভি, অন্ত্রের ক্ষয়, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ইত্যাদি।
২০১৩ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, এ বছরে ৪ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যুর সরাসরি কারণ ছিল কোকেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *