৫ বছর পরে পিঠে খালাম,বেদে সম্প্রদায়ের জন্য শীতের পিঠা উৎসব,স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন

Uncategorized অন্যান্য

মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
টাকা-পয়সার জন্য আমরা গরিব লোক পিঠে বানায় খাতি পারি না। আপনারা খাওয়াচ্ছেন বলে পাঁচ বছর পরে পিঠে খালাম। খাইয়ে অনেক খুশি হলাম। আপনাদের জন্যি অনেক দোয়া করবো। বেদে পল্লীর পিঠা উৎসবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন বেদেনী সুশিলা। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) নড়াইলে দিনব্যাপী রাসেল সেতু সংলগ্ন বেদে পল্লীতে ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের জন্য শীত বাজার ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থীত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। দুপুর সাড়ে ১২টায় পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। চিতই,আন্দসা,পায়েশ,রসে ভেজা চিতই,পুলি,ভাপা, রসপাকানসহ নানা নামের আর স্বাদের প্রায় ২০ প্রকারের পিঠার স্বাদ গ্রহণ করেন,বেদে পল্লীর ১৫ ঘরের প্রায় ৩৫ জন সদস্যসহ অনুষ্ঠানে আগত অতিথি’রা। অনুষ্ঠানে গরম গরম ভাপা পিঠা,সরিষা বাঁটা,ধুনিয়া, মরিচ ভর্তা,কালোজিরার ভর্তাসহ কয়েক প্রকারের ভর্তাসহ গরম চিতই পিঠা যেন উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। বেদে পল্লীর সকল সদস্যের জন্য শীতবস্ত্র, কম্বল উপহার হিসেবে আনেন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী’রা। বেদে পল্লীর প্রতি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের শুকনো খাবার (চাল,ডাল,তেল,মরিচ,লবন,
হলুদ,মশলা) জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে বেদে পল্লীর ছোট থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবার খুশির যেন অন্ত নেই। পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি বেদে পল্লীতে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নাচ গানে মুগ্ধ হন আমন্ত্রিত অতিথিরা। বেদে পল্লীর সরদার রতন বলেন,আপনা’রা পিঠা মাঠা বানায় আনছেন,ছেলে পেলে নিয়ে খাচ্ছি খুব আনন্দ লাগছে। জামা-কাপড় কম্বল উপহার পাইয়ে আমরা খুব আনন্দিত। আপনাদের সবার জন্যি দোয়া করি। ছোট্ট রাখিনুর ও নবীনূর বলে,আমরা এই পিঠা আগে কখনো খাইনি। জামা-কাপড়গুলো খুব সুন্দর। অনেক আনন্দ লাগছে। আউড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম পলাশ বলেন,মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানবিক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার সহায়তায় আমরা পিছিয়ে পড়া সকল মানুষের সহায়তায় কাজ করছি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মতো অন্য সংগঠনগুলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করলে আমরা ভেদাভেদ বৈষম্য ভুলে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব। শিক্ষার্থী ও স্বপ্নের খোজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মির্জা গালিব সতেজ বলেন,আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আজ ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। তাদের শীত লাঘবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় ঘটানোই আমাদের আজকের উদ্দেশ্য।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন,শীতের আমেজ ঘেরা এই দুপুরে আমরা একত্রিত হয়েছি অত্যন্ত আনন্দঘন মুহূর্তে। পিছিয়ে পড়া নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে বেদে সম্প্রদায়কে আপন ভেবে সামাজিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডকে উৎফুল্ল করতে ও সার্বিক সহোযোগিতার জন্য সরকার থেকে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন নড়াইলে বরাবরের মতো পিছিয়ে পড়া নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বেদে সম্প্রদায়,পল্লীর উন্নয়ন,তাদের লেখা-পড়া,স্বাস্থ্য, চিকিৎসা,আনন্দ বিনোদনের ক্ষেত্রে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সার্বিকভাবে সহায়তা করছে। নড়াইল জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রতন কুমার,সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম,
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম লিটু,স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মো. ফয়সাল মোস্তারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *