ডিসেম্বর মাসেই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আট পদে পরিবর্তন

Uncategorized অন্যান্য


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ডিসেম্বর মাসেই প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিবসহ আট সচিবের পদে পরিবর্তন আসছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস আজ অবসরে যাচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অবসরে যাবেন আগামী ১৫ ডিসেম্বর। চাকরির বয়স অনুযায়ী আরো ছয় সচিবের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা। জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, এই আট পদে পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে আরো বেশ কয়েকটি পদে রদবদল হতে পারে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দ্বিতীয় দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। এরপর নতুন মন্ত্রিপরিষদসচিব হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির বিন আনোয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হয়েছে।
সাধারণত মন্ত্রিপরিষদসচিব হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবেও এগিয়ে আছেন কবির বিন আনোয়ার। তিনি বিসিএস সপ্তম ব্যাচের একমাত্র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন।
নিয়োগের ১৯ দিন পরই অবসর : জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের অবসরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত আছে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি। তাঁকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হলে ১৯ দিন পরই অবসরের সময় হবে তাঁর। এরপর তাঁকে এ পদে রাখতে হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। সরকার গত প্রায় এক বছর গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদ আলোচনায় থাকায় বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তারা নীতিগতভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিপক্ষে। কারণ তাঁকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে অষ্টম ব্যাচের আর কোনো কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব হতে পারবেন না। এই ব্যাচের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আগামী ছয় মাসের মধ্যে অবসরে চলে যাবেন। ১০তম ও ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অনীহা আছে। সম্প্রতি জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের অবসরে যাওয়ার পাঁচ দিন আগেই প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তদবির ঠেকাতে স্থানীয় সরকার বিভাগে পদ খালি হওয়ার অন্তত এক মাস আগে নতুন নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। অবসরে যাওয়া খাদ্যসচিব নাজমানারা খানুমকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ডিও লেটার দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়নি। সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হবেন মন্ত্রিপরিষদসচিব, দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হবেন মুখ্য সচিব—এটাই নিয়ম। এই নিয়ম শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়াসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও মানা হয়। আমাদের দেশেও সেটা বেশির ভাগ সময় মানা হয়েছে। কিন্তু দু-এক সময় ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যত্যয় যখন ঘটেছে তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে। তবে এমন ঘটনা খুবই কম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) আব্দুস সবুর মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি-পদোন্নতির সিদ্ধান্ত শেষ সময়ে হয়। আবার কোন পদে কে আসছেন, এটা আগে থেকে বলা যায় না। কারণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়। মুখ্য সচিব হতে চান অষ্টম ও নবম ব্যাচের কর্মকর্তারা : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস আগামীকাল অবসরে যাবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত রবিবার ধন্যবাদ প্রস্তাব ও অবসরের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অবসরের পর আহমদ কায়কাউসকে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এ পদে নিয়োগ পেতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অষ্টম ও নবম দুই ব্যাচের কর্মকর্তারাও চেষ্টা করছেন বলে সচিবালয়ে আলোচনা আছে।
অষ্টম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যদি মন্ত্রিপরিষদসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে মুখ্য সচিবের পদেও জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া উচিত। এই ব্যাচের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা হলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
নবম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তিনি চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই মুখ্য সচিবের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি ভালো অবগত আছেন। তাঁকে মুখ্য সচিব করা হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পদও শূন্য হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা সব সময় যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়নের চেষ্টা করছি। প্রশাসনের শীর্ষ পদের ক্ষেত্রেও সেটা হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই এ কাজগুলো নিরপেক্ষভাবে করা হয়। ’
৩১ ডিসেম্বর যাঁরা অবসরে যেতে পারেন : ৩১ ডিসেম্বর যে ছয় সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা তাঁরা হলেন বিপিএটিসির রেক্টর রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মামুন-আল রশীদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব খলিলুর রহমান এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *