নির্বিকার সমবায় অধিদপ্তর
নিজস্ব প্রতিনিধি : সমবায় আইন ও বিধিমালা ভঙ্গ করে সমবায় সমিতি সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: বেআইনী শাখা পরিচালনা সহ অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা এই কথিত সমবায় প্রতিষ্ঠানের। সমবায় আইন বিধিমালা কিছুই তোয়াক্কা করছে না। সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন-২০১৩ এ অসদস্যদের কাছ থেকে আমানত গ্রহন ও ঋণ প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন সহযোগী সদস্য বানিয়ে জনসাধারণের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করছে। এবং অসদস্যদের মধ্যে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করছে। সমবায় আইনে সহযোগী সদস্য রাখার কোন বিধান নাই। আবার সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন ২০১৩ এর ১৮ (১) ধারায় সমবায় সমিতির কোন শাখা পরিচালনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এই সমবায় সমিতি মাদারিপুরের জাজিরা,শিবচর,গাজিপুর সহ ঢাকা বিভাগে ১৮ টি শাখা পরিচালনা করছে।প্রতিটি শাখার মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করছে। প্রতিটি শাখার রয়েছে নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট। ২০১৩ সালে সমবায় আইনের সংশোধনী পাস হলে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বিদ্যমান শাখাসমুহের সাইনবোর্ডে শাখা শব্দ পরিবর্তন করে সদস্য সেবা কেন্দ্র লেখা হয়। ১৩ সালের পরও একাধিক শাখা খোলা হয়েছে।সম্প্রীতি ক্রেডিট ইউনিয়নের অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে হামলা মামলার ভয় দেখান সমিতির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো: আব্দুল মান্নান খান ও ট্রেজারার চরমপন্থী নকশালের সাবেক সদস্য এমদাদ হোসেন মালেক।
সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর চেয়ারম্যান এ্যাভোকেট মো: আব্দুল মান্নান খান। রয়েছে নয় সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটিও। তবে সমিতির মুল নিয়ন্ত্রক ট্রেজারার কাম প্রধান নির্বাহী এমদাদ হোসেন মালেক ও তার পরিবার।
পারিবারিকীকরন করে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছেন সমিতির ট্রেজারার কাম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন মালেক। প্রতিকার চেয়ে সমিতির সদস্য মো: আহছান উদ্দিন ১৯/৯/২০১৯ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন ও সমবায় অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের অডিট রিপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৯১ জন। মহিলা সদস্য ১১ হাজার ৯৬৭ জন, পুরুষ ৫ হাজার ৪২৪ জন।নারী সদস্য ৬৮.৮১ শতাংশ। সম্পদ আহরনে নারীদের ভুমিকা ৮৫ শতাংশ। সঞ্চয়ী হিসাবধারী ১৩ হাজার ৬৯৮ জন। মুলধন ৪০,৩৯,৭০,৮৫৫.৪০ টাকা। সদস্য সেবা কেন্দ্র নামে বেআইনী শাখা ১৮টি। ব্যবস্থাপনা কমিটি নয় সদস্যের। এরমধ্যে এমদাদ হোসেন মালেক কোষাধ্যক্ষ। আবার তিনি নির্বাহী প্রধান। যা আইন সম্মত নয়। কর্মী সংখ্যা ১২৩ জন। এরমধ্যে মালেকের বড় ছেলে নুরে আলম নিরব অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে মালেকের আত্বীয় ও পরিবারের সদস্যগণ দায়িত্বে রয়েছে। সঞ্চয় প্রকল্প ১৬টি। ঋণের সুদের হার ১৮ শতাংশ। যা ব্যাংকের প্রচলিত সুদ হারের দ্বিগুণ। অথচ আমানতের বিপরীতে মুনাফার নামে গড় সুদের হার মাত্র ৪.৫০ থেকে ৬ শতাংশ। অনুমোদিত শেয়ার মুলধন ১০ কোটি টাকা।আদায়কৃত শেয়ার মুলধন ৫৬৫,৭৮,১৯১ টাকা। অর্জিত প্রকৃত লাভ মাত্র ৩৮,৪১,৬৫৮.৬১ টাকা। তার লাগামহীন দুর্নীতির কারণে সমিতির মুনাফা এত কম। ২৯/৯/২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত এজিএম এ সদস্য উপস্থিত ছিল মাত্র ৩৭৮৬জন। একই তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪৮৪জন। আসলে এজিএম-এ উপস্থিত ছিল অনেক কম। নিয়ম রক্ষার জন্যে কাগজে কলমে ঐ সংখ্যা দেখানো হয়েছে। আবার সদস্য যেখানে ১৭ হাজার ৩৯১ জন সেখানে চুড়ান্ত ভোটার ৭ হাজার ৪৮৪ জন কেন? বাকী প্রায় ১০ হাজার সদস্য ভোটার নয় কেন? তাছাড়া সমিতির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়নি। সমবায় অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মালেক সব সময় পকেট কমিটি করেছেন।
সমিতির নামে জমি ক্রয়, ভবন নির্মান ও ফ্লাট ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মালেক ও তার পরিবার। উত্তরার আমাইয়া মৌজায় ১২৩৫ অযুতাংশ ৬/৮/২০১৮ তারিখে ৩৬,৮৫,৫৫৭ টাকা, গাজীপুরের পুবাইলে বসুগাাঁও মৌজায় ৮.২৫ শতাংশ ১২/১২/২০১১ তারিখ ২৪,৬৯,৩২০ টাকা। কালিগঞ্জের নাগরীর বাইমাকান্দা মৌজায় ১৩/৯/২০১২ তারিখে ৫২,৮৩,৩৯৬ টাকায় ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয়। বাড্ডার আফতাব নগরে ৫/২/২০১৮ তারিখে ৩১৮,১৮,১৭০ টাকায় ৬.১২৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। আফতাব নগরে সমিতির প্রধান কার্যালয়ের জন্যে ভবন নির্মান কাজ চলছে। এজন্যে ২০ জানুয়ারী -২০১৫ তারিখে সমবায় অধিদপ্তর থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এছাড়া মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতায় ১৩/৯ হোল্ডিং এ ৬ডি ২২৫০ বর্গফুটের একটি ফ্লাট ২৭,৩৫,৭১৬ টাকায় ১১/১২/২০১৪ তারিখে ক্রয় করা হয়েছে। এখানে দলিলে প্রদর্শিত মুল্য উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রকৃত বাজার মুল্যের দ্বিগুন দলিলে প্রদর্শন করা হয়েছে। ক্রেতা- বিক্রেতার পারস্পরিক যোগসাজসে সমিতির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আফতাব নগরে সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সমিতির জন্যে একটি মাইক্রোবাস ক্রয় করা হয়েছে। যা সর্বদা মালেকের পরিবার ব্যবহার করে। অথচ ড্রাইভারের বেতন ও পেট্রোল খরচ দেয়া হয় সমিতি থেকে। এ ছাড়া মালেক সিইও হিসেবে বিধি বহির্ভুতভাবে নানা ভাতা গ্রহন করেন। তিনি কালবের সেক্রেটারী হওয়ায় তার অধিনস্থ কর্মচারীরা যথাযথভাবে অডিট করতে পারেনা। যে কারনে তার দুর্নীতির কিছুই অডিট রিপোর্টে আসেনা। সমবায় অধিদপ্তর অডিট করলে তার সকল অপকর্ম বেরিয়ে আসবে।
সমবায় অধিদপ্তর এই সমিতির অডিট করেনা। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কালব নামকাওয়াস্তে অডিট করে। ফলে অনিয়ম দুর্নীতি অডিট রিপোর্টেও উঠে আসেনা। মালেক ও তার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় সাধারণ সদস্যদের কিছুই জানার সুযোগ থাকেনা। সমবায় আইন ও বিধি অনুযায়ী কখনোই নির্বাচন ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়না। যা অডিট রিপোর্টের উপরোক্ত তথ্যে অনুমেয়। সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা তার অপকর্মের সহযোগী। বিধবা বিত্তহীন মহিলাদের কষ্টের সঞ্চয়ের টাকায় বিলাসিতা করে মালেকের পরিবার। সাধারণ সদস্যরা মুলত: সমবায়ের উপকারভোগী নয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলার মঠেরবাজারের চরগোবিন্দপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান আকন্দের ছেলে এমদাদ হোসেন মালেক এক সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের সদস্য ছিল। শুন্য হাতে ঢাকায় এসে প্রেসে কাজ করতেন। সমবায় লুট করে তিনি আজ প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক। চতুর মালেক নিজের নামে না করে পরিবারের সদস্য ও আত্বীয় স্বজনের নামে সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে তুলেছেন। নানা পন্থায় সমিতির অর্থ অন্যত্র পাচার করেছেন।সমিতির অর্থ জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে অনুদান দেয়ার রিউমারও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।
সমিতির সাধারণ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে অতিদ্রুত সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ ও অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সচেতন সদস্যগণ।