রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে বাংলাদেশ

Uncategorized জাতীয়


বিশেষ প্রতিবেদন ঃ বৈশ্বিক মহামন্দা ও অস্থিরতার মাঝেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আয়ে কিছুটা হলেও সুবাতাশ বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া রেমিট্যান্স প্রবাহ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীরা দেশে ১৬.৯৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা কিনা টাকার হিসেবে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার সমান হয়। এই রেমিট্যান্স আয় কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস অপেক্ষা ৪.২৩% বেশি ছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১.৫৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং গত অক্টোবর মাসে ১.৫২৬ বিলিয়ন ডলার সেপ্টেম্বর মাসে ১.৫৪০ বিলিয়ন ডলার বৈধ পথে রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত রেমিট্যান্স আয় সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স বাবদ দেশে এসেছে ১০.৪৯ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা নিশ্চিতভাবেই দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদিও অবশ্য ২০২২ সালে ‘বিশ্বব্যাংক’ তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে নেতিবাচক আকাঙ্খার তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করেছিল। তবে বাস্তবে আবারো তা ভূল প্রমান করে গত নভেম্বর মাস থেকেই বাংলাদেশে রেমিটান্স প্রবাহ আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

যেখানে প্রবাসী কর্মীরা ২০২০ সালে রেমিট্যান্স পাঠান ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া চলতি ২০২২ সালের ১২ মাসে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে আসে ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২১.০৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করে বাংলাদেশ। এদিকে আমাদের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন দশক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে, দেশে অবৈধ অর্থিক সিন্ডিকেট বা হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে আমাদের দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স আয় করা সম্ভব হতো।

২০২২ অর্থবছরে আমাদের বন্ধুদেশ ভারত সর্বোচ্চ ৮৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে। যা কিনা বিশ্বের কোন একক দেশ হিসেবে এটি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের গবেষণা মতে ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করতে পারে। আর দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে রেমিট্যান্স বাবদ মোট আয় করে ২৭.৪৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্যমতে, দেশটি ২০২২ অর্থবছরে মোট ৩১.২৮ এবং ২০২১ অর্থবছরে মোট ২৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বাবদ দেশে পাঠায় দেশটির প্রবাসী কর্মীরা।

এদিকে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা’র দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে শ্রীলংকা ২.৯৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে রেমিট্যান্স খাত থেকে এবং ২০২১ সালে তা ছিল কিনা ৫.৪৯ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশটির পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋন ও দেনার বিপরীতে মাত্র ১.৯ বিলিয়ন ডলারের ফরেক্স রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স আয় মোটেও যথেষ্ঠ কিছু হতে পারে না। যা অবশ্যই অন্যান্য সকল উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়ের দেশের জন্য সতর্ক বার্তা হিসেবে থেকে যাচ্ছে। (লেখক ঃ সিরাজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক, সিংড়া, নাটোর,)


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *