দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে হামলা টিকাটুলিতে থমথমে পরিস্থিতি

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র রাজধানী রাজনীতি

*এই এলাকার ডিসি-ম্যাজিস্ট্রেট সবই মঞ্জু

*মঞ্জুর চাঁদার খনি রাজধানী মার্কেট

 

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : রাজধানীর টিকাটুলিতে ভোলা নন্দগীরী আশ্রমের দখল করা জায়গা উদ্ধারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালী ও কাউন্সিলর মঞ্জুর সমর্থকরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ উদ্ধার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এ নিয়ে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযানে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে আশ্রমের নির্মাণ করা দেয়াল। তবে এ ঘটনায় পুলিশের নিরব ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের দাবি, কাউন্সিলর মনজুর সন্ত্রাসী বাহিনীই এই হামলা চালিয়েছে।
এর আগে, সকালে আশ্রম কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনগণ বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করে। এসময় হিন্দু ও মুসলিম সংগঠনের নেতা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এলাকাবাসী জানায়, স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রমটি প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কাউন্সিলর মনজু অবৈধভাবে সাড়ে তিন বিঘা জমি ও একটি পুকুর দখল করে নেন। প্রার্থনায় বাধা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে মঞ্জুর বিরুদ্ধে।
মঞ্জুর চাঁদার খনি রাজধানী মার্কেট : ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু রাজধানী সুপার মার্কেটকে বানিয়েছিলেন তাঁর টাকার খনি। কোনো ব্যবসায়ী যদি দোকানে আইটেম পরিবর্তন করতেন, তাহলে মঞ্জুকে দিতে হতো দুই লাখ টাকা চাঁদা। আর জেনারেটর বাণিজ্য করতে লোডশেডিং না হলেও মার্কেটের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতেন। খেয়াল-খুশিমতো ওই মার্কেটে দোকান নির্মাণের পর মালিকানা দাবি করে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দম্ভ করে মনজু বলতেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর কিছুই করতে পারবে না।
রাজধানীর হাটখোলা রোডের ১৫/২ নম্বর বাড়িটিও দখল করে নিজের বলে দাবি করেন মনজু। একটি ফ্ল্যাট কিনে পরে ওই বাড়ির মালিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ করে নিজের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মালিক বনে যান। তাঁর ও তাঁর বাহিনীর ভয়ে তটস্থ ছিল এলাকাবাসী। একইভাবে রাজধানী মার্কেটেও দুটি দোকান লিজ নিয়ে একপর্যায়ে পুরো মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেন মঞ্জু। রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ী, স্থানীয় লোকজন এবং র‌্যাব-পুলিশের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের দিন কাউন্সিলর মঞ্জুর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন। গত ১১ বছর মনজু ও তাঁর বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কাউন্সিলর ও সরকারি দলের রাজনীতি করায় নিজেকে ওই এলাকার রাজা ভাবতেন মঞ্জু। তাঁর বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও পাত্তা দিতেন না মনজু। তিনি বলে বেড়াতেন, আমি এই এলাকার ডিসি, ম্যাজিস্ট্রেট সব। আমার বিষয়ে কিছু জানতে হলে আমার কাছে আসতে হয়। আমি কারো কাছে যাই না।
১১ বছর আগে দুটি দোকান লিজ নিয়ে রাজধানী মার্কেটে প্রবেশ করেন মঞ্জু। এরপর পুরো মার্কেটে তাঁর আধিপত্য বিস্তার করতে ক্যাডার ধরনের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জোগাড় করেন। ওই সময় মার্কেটে ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন লুৎফর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী। সেক্রেটারি ছিলেন ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ঢালী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন মনজু। ২০০৯ সালে একদিন রাতে মনজু তাঁর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির অফিস থেকে নির্বাচিত সভাপতি ও সেক্রেটারিকে জোর করে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেন। মনজু তখন ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর কথা ছাড়া আর রাজধানী মার্কেট চলবে না। পরদিন থেকে তিনি নিজেকে মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি দাবি করেন। সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত মনজুই রাজধানী মার্কেটের সভাপতি। আর এই সময়ের মধ্যে ওই মার্কেটে চালিয়েছেন যথেচ্ছ চাঁদাবাজি।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার ঘোষিত বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা। কিন্তু প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে দিতে হয় ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি মাসে ৮-১০ লাখ টাকা শুধু বিদ্যুৎ থেকেই চাঁদাবাজি করতেন মঞ্জু।
২০ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাড়ে চার বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় রাজধানী সুপার মার্কেট। ১৪ জন ব্যবসায়ী মার্কেটটি লিজ নিয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশ এরই মধ্যে মারা গেছেন। তাঁদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজধানী সুপার মার্কেটে ওই সময় যাঁরা দোকান বরাদ্দ নিয়েছিলেন, প্রতি দোকানের জন্য দিতে হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। এরপর প্রতি দোকান থেকে মাসে ভাড়া নেওয়া হতো ২৮০ টাকা। যা পর্যায়ক্রমে বর্তমানে উঠেছে এক হাজার টাকায়। জমি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের হলেও নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ মঞ্জু হাতে।
জানা গেছে, অবৈধভাবে মঞ্জু ১১০টি দোকান বিক্রি করেন। প্রতিটির দাম ১০ লাখ টাকা। এ বাবদ তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ কোটি টাকার বেশি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *