ইতিহাসের সবচেয়ে হাস্যকর যুদ্ধ

Uncategorized অন্যান্য


সামরিক বিশ্লেষক : ইতিহাসে কি এমন কোনো যুদ্ধ ঘটা সম্ভব, যেখানে মূলত কোনো প্রতিপক্ষই নেই? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ সম্ভব। আর সেটা হলো কারানসেবাসের যুদ্ধ।

ঘটনার শুরু যেভাবে:
১৭৮৮ সালে অস্ট্রিয়ার সাথে তুরস্কের যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিলো। সেই যুদ্ধের অংশ হিসেবেই অস্ট্রিয়ান আর্মি মার্চ করে চলছিলো রোমানিয়ার দিকে। তুরস্কের আর্মিরাও বসে ছিলো না। তারাও চলছিলো রোমানিয়া অভিমুখে। সেই যাত্রাপথেই হলো ঘটনার সূত্রপাত।

অস্ট্রিয়ান বাহিনী রোমানিয়ার ‘কারানসেবাস’ নামক এক জায়গায় এসে রাতের বিশ্রামের জন্যে ক্যাম্প বানালো। তারা যখন ক্যাম্প বানাতে ব্যস্ত, তখন সেই দলের একটা ছোট্ট অংশকে ঘোড়ায় করে ‘স্কাউট’ হিসেবে পাঠানো হলো আশেপাশের এলাকাটা একটু যাচাই করে দেখতে, টার্কিশ আর্মি কাছাকাছি কোথাও এসে আগেভাগেই ঘাপটি মেরে আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে। সেই ‘স্কাউট’ দল ঘুরতে ঘুরতে একটা ‘জিপসি’ বসতির কাছে চলে এলো। সেখানে এসে তারা দেখলো, জিপসিদের কাছে বেশ ভালো পরিমাণে ম##দের সাপ্লাই আছে এবং তারা সেগুলো এই সৈন্যদের নিকট বিক্রি করতেও আগ্রহী। ক্যাম্প হতে বাইরে এসে সামরিক শৃঙ্খলার কঠিন শিকল হতে খানিকটা মুক্ত হয়ে যাবার ফলে স্কাউটেরা ভাবলো একটু ফূর্তি করে নেয়া যাক। তারা সেগুলো কিনে নিয়ে সেখানেই পার্টি জমিয়ে দিলো জিপসিদের সাথে।

পার্টি যখন মোটামুটি চরমে, তখন সেই এলাকায় থাকা অস্ট্রিয়ার আরেক পদাতিক বাহিনীর স্কাউট দল হাঁটতে হাঁটতে সেই জিপসিদের আস্তানায় এসে উঠলো। তারাও পার্টিতে অংশ নিতে চাইলো। কিন্তু প্রথম দলের স্কাউটেরা (যারা ইতোমধ্যেই বদ্ধ মাতাল) জানালো, দ্বিতীয় দলকে কোনো ম#দ দেয়া হবেনা, কারণ প্রথম দল নিজেদের জন্যে এই ম#দগুলো কিনেছে। এক পর্যায়ে শুরু হলো বচসা, সেখান থেকে হাতাহাতি, ধ্বস্তাধস্তি, এবং শেষ পর্যন্ত গোলাগুলি।

যুদ্ধ বাঁধলো যেভাবে:
গোলাগুলির শব্দে পুরো এলাকা সরগরম হয়ে উঠলো। জিপসি ক্যাম্প (দুই স্কাউট দলের মারামারির অবস্থান) হতে একটু দূরে থাকা দ্বিতীয় দলের সেই পদাতিক ডিভিশন ভাবলো টার্কিশরা তাদের উপর হামলা করেছে। তারা চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিলো। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে সেই জিপসি ক্যাম্পে মারামারিতে ব্যস্ত মাতাল স্কাউটদেরও টনক নড়ে উঠলো। তারাও ভাবলো, মারামারির ফাঁকে তাদের ঘাড়ের পেছনে নিশ্চয়ই টার্কিশ আর্মি এসে উপস্থিত হয়েছে।

প্রথম দলের স্কাউটেরা জলদি ঘোড়ায় চড়ে বসে তাদের ক্যাম্পের দিকে ছুটতে লাগলো। দ্বিতীয় দলের স্কাউটেরা দৌড়াতে লাগলো তাদের ক্যাম্পে। কিন্তু ক্যাম্পে যাবার সময় সেই পদাতিক ডিভিশনের মাঝ দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে নিয়ে গেলো প্রথম দলের স্কাউটেরা। রাতের আঁধারে সেই ছুটন্ত ঘোড়া দেখে পদাতিক বাহিনী নিশ্চিত হয়ে গেলো টার্কিশ বাহিনী তাদের উপর হামলা করেছে। ফলে কাল্পনিক শত্রুর আক্রমণে অস্ট্রিয়ার সেই পদাতিক বাহিনী পিছু হটে পালাতে লাগলো।

বিড়ম্বনা এখানেই শেষ হলে ভালো ছিলো, কিন্তু হয়নি। ‘তুর্কী বাহিনীর আক্রমণের গুজবে’ আরও কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিলো আরেকটা ব্যাপার। সেটা হলো, অস্ট্রিয়ার বাহিনী ছিলো বিভিন্ন জাতির সৈন্যদের মিশ্রণ। সেখানে জার্মানির সৈন্যরাও ছিলো। এমন কিছু জার্মান কমান্ডিং অফিসার যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য “হল্ট! হল্ট! (Halt! Halt!)” করে চেঁচাচ্ছিলো, তখন তাদের জার্মান উচ্চারণের কারণে সেটাকে নন-জার্মান সৈন্যদের নিকট শোনা যেতে লাগলো “আল্লাহ! আল্লাহ!” বলে চিৎকার করে জিকিরের মত। ফলে তারা আরও নিশ্চিত হয়ে গেলো টার্কিশ বাহিনী তাদের ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে এবং এখনই “আল্লাহু আকবার” বলে তাদের গর্দান কাটবে।

যখন পুরো বাহিনীই তাদের মূল ক্যাম্পে জড়ো হলো, তখন সেই ক্যাম্পের অফিসার সব সৈন্যের বক্তব্য শুনে পরিস্থিতি উপলব্ধি করলেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্তে চলে আসলেন। কী সেই সিদ্ধান্ত? অস্ট্রিয়ান সৈন্যরা যেদিক হতে ছুটে এসেছিলো, সেদিকে ‘আর্টিলারি ফায়ার’ করা, যাতে রাতের আঁধারে পিছু পিছু ধাবমান টার্কিশ সৈন্যরা সেই ফায়ারে কচুকাটা হয়!

গভীর রাতে আর্টিলারি ফায়ারে মূল ক্যাম্পের বাকি সবাই ঘুম হতে জেগে উঠলো আর বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিকের মত এদিক-সেদিক ছুটলো শত্রু নিধনে। গাছের ছায়ায়, ঝোপে-ঝাড়ে তারা একের পর এক মেরে চললো ছায়ামূর্তির মত ধেয়ে আসা তুর্কী সৈন্যদের (যারা মূলত সেই পদাতিক ডিভিশনের সৈন্য)। পুরো ‘লুনি টিউনস’ মার্কা ঘটনার সমাপ্তি ঘটলো আরও খানিকক্ষণ বাদেই যখন এই কাল্পনিক শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে (!) অস্ট্রিয়ান বাহিনী পিছু হটলো।

এই ঘটনায় পরে অস্ট্রিয়ান বাহিনীর কয়জনকে কোর্ট মার্শাল করা হয়েছিলো, সেটা সঠিক জানা না গেলেও এটুকু জানা গিয়েছিলো যে, রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি ‘দ্বিতীয় জোসেফ’ (যার নেতৃত্বে অস্ট্রিয়া যুদ্ধ করছিলো) ক্যাম্প হতে বেরিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ পরিদর্শন করতে গিয়ে পলায়নকারী সৈন্যদের ধাক্কায় খাদে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন।

যাই হোক, দু’দিন পরে তুর্কী সৈন্যরা এসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেয়া শুরু করলো যখন দেখলো ময়দানে ১০,০০০ এর বেশী অস্ট্রিয়ান সৈন্য নিজেরাই যুদ্ধ করে মরে পড়ে আছে। (তথ্য সূত্র : ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম)


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *