নিজস্ব প্রতিবেদক : বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আদালতে দাখিল করা চার্জশিট ‘নির্ভুল’ দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শিগগিরই এর বিচার হবে, আমরাও এটা আশা করছি।

বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিজয় দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আবরার ফাহাদ হত্যার চার্জশিট ও বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিচারের বিষয়টি পুলিশের অধীনে নয়, বিচার আদালত করবে। আমরা আগেই বলেছি আমরা নির্ভুল চাজর্শিট দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা নেব। আমরা আশা করি, আমাদের তদন্ত সংস্থা পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে যে চার্জশিট দিয়েছে, তা নির্ভুল চার্জশিট।
সড়ক আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সড়ক বিভাগের মন্ত্রী বলেছেন, কিছুদিন আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানানো হবে। সময় মতো তিনি আইনটি প্রয়োগে আমাদের নির্দেশনা দেবেন। দেশের মানুষের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রচেষ্টা রয়েছে। বিআরটিএ-তে ভিড় লেগে গেছে। জনগণকে বোঝালে তারা আইন মানার চেষ্টা করে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশের যে দায়িত্বটি, তারা তা পূর্ণভাবেই পালন করছে। তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব নেই, প্রচেষ্টায়ও দুর্বলতা দেখছি না। পৃথিবীর সব জায়গায়ই যানজট হয়, বাংলাদেশের যানজটের জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আশা করি আমরা শীঘ্রই সুন্দর রাস্তা পাব।
বিজয় দিবসে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিকদের বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্মৃতিসৌধে আনা-নেওয়া করা হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা ও পরিস্থিতি এড়াতে সাভার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকাটিও সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যেন কোনও নাশকতা কেউ ঘটাতে না পারে। ঢাকা থেকে সাভার পর্যন্ত কোনও তোরণ করতে দেবো না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যালির আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠানের সাত দিন আগেই সংশ্লিষ্ট থানা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হবে। ৪১১টি স্থানে ফায়ার সার্ভিস এলার্ট থাকবে। স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম, অ্যাম্বুলেন্স থাকবে স্মৃতিসৌধসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবসের র্যালি, প্যারেডসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে এলইডি স্ক্রিন বসানো হবে, যেন সাধারণ মানুষ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগে থেকেই মানুষ আলোকসজ্জা করে থাকে। কিন্তু শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকাসহ সারাদেশে কোথাও কোনও আলোকসজ্জা করা যাবে না।
উল্লেখ্য, বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গেল ৬ অক্টোবর রাতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন আবরারের বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এই ২৫ জনের মধ্যে ১১ জন আবরারকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। আর সেখানে উপস্থিতি এবং অন্যভাবে সম্পৃক্ততার কারণে বাকি ১৪ জনকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিবির হিসেবে সন্দেহের বিষয়টি ছিলো আবরারের ওপর নির্যাতনের ‘একটি কারণ’। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত’ হয়ে গিয়েছিল।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জসিম উদ্দীন জানান, অভিযোগপত্রে মোট ২১টি আলামত, ৮টি জব্দ তালিকা যুক্ত করা হয়েছে।