বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে ২০২১ সালে ফাইভ-জি চালু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ফাইভ-জি সেবা চালুর জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র গঠিত কমিটি প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করেছে। গত ১০ অক্টোবর কমিটি এই প্রাথমিক রূপরেখা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রূপরেখা তৈরির পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে কমিটিকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কমিটি একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করে দেবে। তার আগে তৈরি হবে খসড়া রূপরেখা। ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ খসড়া রূপরেখা তৈরি হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির ২২৯তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত-৫ অনুযায়ী বাংলাদেশে ফাইভ-জি প্রযুক্তি প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি রূপরেখা তৈরির জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগের কমিশনারকে আহ্বায়ক ও একই বিভাগের উপ-পরিচলককে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ফাইভ-জি প্রবর্তনের রূপরেখা, সম্ভাব্য তরঙ্গ,সম্ভাব্য তরঙ্গমূল্য এবং বাস্তবায়নের সময়কাল উল্লেখ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে কমিটি একাধিক সভা করেছে। পরবর্তী সভা আগামী ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮-এর লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করবো। এরপর রূপরেখা অনুযায়ী তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি হয়েছে, তাতে ফাইভ-জি আগে ঢাকায় শুরু হবে, ২০২৩ সালের মধ্যে বিভাগীয় শহরে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি টোটাল ইকোসিস্টেম। এই ইকোসিস্টেম আগে তৈরি করতে হবে। রূপরেখায় এর সবই থাকবে।
জানা গেছে, ফাইভ-জি চালু করতে আগে দেশে ফাইভ-জি সমর্থিত ডিভাইসের প্রতুলতাও থাকতে হবে। আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ডিভাইসও থাকতে হবে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক। এসব থাকলেই ব্যবহারকারীরা উচ্চ গতির ইন্টারনেট পাবেন।
কমিটির একজন সদস্য নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূল কমিটির অধীনে ৮ থেকে ৯টি উপ-কমিটি রয়েছে। প্রত্যেকটি কমিটিকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই কাজ এগোচ্ছে। তিনি আরও জানান, এরইমধ্যে একাধিকবার অনুষ্ঠিত সভায় ফাইভ-জি’র জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করে তা থেকে প্রাথমিক রূপরেখার খসড়া তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে মূল খসড়া লেখার কাজ শুরু হবে।
জানা যায়, গঠিত একটি উপ-কমিটি ফাইভ-জি’র তরঙ্গ মূল্য নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ব্যান্ডের তরঙ্গ মূল্য প্রস্তাব, বিভিন্ন ব্যান্ডের তরঙ্গের প্রস্তাবিত মূল্যের যৌক্তিকতা, বেতার তরঙ্গ বরাদ্দের পদ্ধতি, ফাইভ-জি’র জন্য প্রয়োজনীয় স্পেক্ট্রাম বর্তমানে কোনও অপারেটরদের বরাদ্দ দেওয়া থাকলেÍ তা খালি করার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করবে।
অন্যদিকে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, অন্যান্য সংস্থা ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব সেবা দিতে আগ্রহী, তার তালিকা চেয়ে দফতরগুলোতে চিঠি পাঠানোর কথা অন্য একটি উপ-কমিটির। আরেকটি উপ-কমিটি ফাইভ-জি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করে ফাইভ-জির জন্য উপযুক্ত সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তাব করে প্রতিবেদন দেবে।
অপর একটি উপ-কমিটি ফাইভ-জির জন্য উপযুক্ত বেতার তরঙ্গের তালিকা, বাংলাদেশে প্রবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গের চাহিদা নিরূপণ, তরঙ্গ বরাদ্দের সময়কাল নির্ধারণ, স্পেক্ট্রাম শেয়ারিংয়ের বিষয়ে মতামত, ফাইভ-জির জন্য প্রয়োজনীয় স্পেক্ট্রাম বর্তমানে কোনও অপারেটরকে বরাদ্দ দেওয়া থাকলে, তা খালি করার পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কাজ করছে।
আরেকটি উপ-কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই উপ-কমিটি টেলিযোগাযোগ খাতের বিদ্যমান পলিসি বা গাইডলাইন পর্যালোচনা সাপেক্ষে ফাইভ-জির জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল আর্কিটেকচার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে গত বছরের ২৫ জুলাই ফাইভ-জির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ফাইভ-জি পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ফাইভ-জি’র সর্বোচ্চ গতি ছিল ৪ দশমিক ১৭ জিবিপিএস।
ফাইভ-জি সামিটে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। সরকারের সহযোগিতায় ফাইভ-জি সামিটের আয়োজনে করে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ের ডিভাইস দিয়ে ফাইভ-জির টেস্ট রান করা হয়।