বাবু মার্কুজ-পংকজের স্বেচ্ছাচারিতা চরমে

অপরাধ অর্থনীতি আইন ও আদালত এইমাত্র

ঢাকা ক্রেডিটে আবারও প্রতিনিধির মাধ্যমে পাতানো নির্বাচনের উদ্যোগ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : খ্রীষ্টান সমাজসহ সমবায়ীদের প্রবল আপত্তি, আদালতে রীট পিটিশন বিচারাধীন, সংসদে সমবায় বিধিমালার বিতর্কিত ২১ বিধি বাতিলের দাবি সত্বেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত বিগত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী বাবু মার্কুজ-পংকজ গিলবার্ট কস্তা গংরা আবারও দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ( ঢাকা ক্রেডিট) এ প্রতিনিধির মাধ্যমে পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। ১৩ ডিসেম্বর-১৯ তারিখে নির্বাচনের লক্ষে ৬ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেছে। এতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোস বিরাজ করছে। তাদের আশংকা গতবারের মত এবারও প্রতিনিধির মাধ্যমে পাতানো লোক দেখানো নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে বাবু মার্কুজ- পংকজ চক্র। দেশের বৃহত্তম সমবায় সমিতিটি রক্ষার জন্যে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সদস্যগণ। ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী চক্রের অব্যাহত অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে ৩৯ হাজার ১৪৫ সদস্যের ৬০৬,৭০,১৬,১০৭.১৯ টাকা মুলধন বিশিষ্ট সমবায় সমিতি আজ ধ্বংসের পথে।
ঢাকা ক্রেডিটে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি চরম আকার ধারন করেছে। ক্রমাগত লোকসানের দিকে ধাবমান সমিতি ধ্বংসের দিকে পতিত হচ্ছে।
সমিতির ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের অডিট রিপোর্টে ব্যবস্থাপনা কমিটির দুর্নীতির আংশিক চিত্র ফটে উঠেছে মাত্র। সমবায় অধিদপ্তর ঢাকা ক্রেডিটের অডিট করেনা বলে পূর্ণাঙ্গ দুর্নীতির চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। ক্ষমতা প্রাপ্ত কালব অডিটে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় যেমন দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়নি তেমনি দুর্নীতি সংঘটনে কালব এর অডিট ক্ষমতা পরোক্ষ ভুমিকা পালন করছে।কালবের অডিট পর্যবেক্ষণে কয়েকটি খাতে সুনির্দিষ্ট আপত্তি করা হয়েছে। তবে কোথায়, কিভাবে, কত টাকা অপচয়, আত্মসাত বা অনিয়ম করা হয়েছে তা বিস্তারিত বলা হয়নি। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পাদিত অডিট পর্যবেক্ষণে বিস্তারিত সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
বাবু-পংকজের বিগত দায়িত্ব পালনকালে সমিতির নামে জমি ক্রয় ,ভবন নির্মান,গাড়ী ক্রয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সঞ্চয় ও ঋণদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও নীতি আদর্শের বাইরে গিয়ে জমি ক্রয়,ভবন নির্মানের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। প্রায় সকল প্রকল্পে লোকসান হচ্ছে। অব্যাহত লোকসানের নেপথ্যে রয়েছে তাদের লাগামহীন দুর্নীতি।কালবের দুর্বল অডিটেও এসব বিষয়ে আপত্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সমবায় আইন-২০১৩(সংশোধনী) ও সমবায় বিধিমালা-২০০৪-এ নানা অসঙ্গতি ও অগণতান্ত্রিক ধারা সমবায়ের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।্এরমধ্যে সমবায় বিধিমালার ২১ বিধি সমবায়ে দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা উস্কে দিচ্ছে। সমবায় বিধিমালার উক্ত অগণতান্ত্রিক বিধি বাতিলের দাবি সমবায়ীদের। ঢাকা ক্রেডিটের বিগত নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একজন সদস্যের হাইকোর্টে করা রীট পিটিশন এখনো বিচারাধীন। অন্যদিকে সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসন-৩০ এর সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ঝর্ণা গ্লোরিয়া জাতীয় সংসদে সমবায় বিধিমালা-২০০৪ এর ২১ বিধি সহ আইন বিধিমালার সকল অগণতান্ত্রিক ধারা বিধি বাতিলের দাবি জানান। সংসদে দেয়া নোটিশে তিনি আরো বলেন- ২১ বিধির অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের ফলে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন ও সাধারন সভা আয়োজনে সমবায় সমিতিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে সমবায়ীগণ অভিযোগ করছেন। ২১ বিধিতে বলা হয়েছে ”যে সকল সমবায় সমিতির ৩ হাজার বা তার অধিক সদস্য রয়েছে ; সে সকল সমিতির নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারন সভা আবাশ্যিকভাবে প্রতিনিধির মাধ্যমে করতে হবে”। অথচ প্রতিনিধি নির্বাচনে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা উক্ত বিধিতে নেই।ফলে ক্ষমতালোভী চক্র ২১ বিধির অপপ্রয়োগ করে প্রতিনিধির মাধ্যমে সাজানো পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। যার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঢাকা ক্রেডিট। এই সমিতির প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত সদস্যদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে সাধারন সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।কিন্ত ক্ষমতালোভী দুর্নীতিবাজ বাবু-পংকজ চক্র ক্ষমতা কুক্ষিগত ও দুর্নীতি লুটপাট চিরস্থায়ী করার জন্যে বিগত নির্বাচনে ২১ বিধির অপপ্রয়োগ শুরু করেন। সদস্যদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও আবার একই উদ্যেগ নিয়েছে।ঢাকা ক্রেডিটের পদাংক অনুসরন করছে দেশের আরো বড় কিছু সমবায় সমিতি।
সমবায় বিশেষজ্ঞদের মতে, সদস্যদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে সাধারন সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সমিতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে । দুর্নীতির করার সুযোগ খুব একটা থাকেনা। আর প্রতিনিধির মাধ্যমে হলে সাধারন সদস্যগণ তাদের ভোটাধিকার যেমন হরায় তেমনি সমিতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণও হারায়। যা মৌলিক অধিকারের লংঘন।আর সমিতির ওপর সকল সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ নাথাকায় দুর্নীতিও চরম আকার ধারণ করে। যার দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে ঢাকা ক্রেডিটের দখলদার চক্র স্থাপন করেছে। ঢাকা ক্রেডিটে অনিয়ম,অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি চরম আকার ধারন করেছে। ক্রমাগত লোকসানের দিকে ধাবমান সমিতি ধ্বংসের দিকে পতিত হচ্ছে। নেতৃত্ব শুন্য করার নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নির্বাচেেন প্রতিদ্বন্দ্বী যোগ্য প্রার্থী ও প্রতিবাদী সাধারন সদস্যদের সদস্যপদ ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা ক্রেডিটের নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলা উচ্চ আদালতে এখনো বিচারাধীন এবং সমবায় অধিদপ্তরে একাধিক নালিশী মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় ঢাকা ক্রেডিটের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ দূনীর্তিবাজ বাবু মার্কুজ চক্র ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যে আবারও প্রতিনিধির মাধ্যমে জালিয়াতির নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কয়েকজন সদস্য বলেন, ঢাকা ক্রেডিট আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন। এই প্রতিষ্ঠান কেবল খ্রীষ্ট্রান সম্প্রদায়ের নয় গোটা সমবায় অঙ্গনের গৌরব। আমরা এই গৌরব, সুনাম, যাতে অক্ষুন্ন থাকে সেজন্যে কাজ করে যাচ্ছি। উল্টো খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের স্বঘোষিত সভাপতি এবং অবৈধ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নাটের গুরু নির্মল রোজারিও, অবৈধ সভাপতি বাবু মার্কুজ গমেজ, সেক্রেটারী পংকজ গিলবার্ট কস্তাসহ বর্তমান কমিটি ঢাকা ক্রেডিটকে অনিয়মের আখড়ায় পরিনত করেছে। তাদের দূনীর্তি আর ক্ষমতার লোভে ঢাকা ক্রেডিট আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই ঢাকা ক্রেডিটকে রক্ষার জন্য নির্মল, বাবু মার্কুজ গংদের কবল থেকে সর্বাগ্রে এই প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে নির্বাচনে যাতে কোন প্রতিদ্বন্দ¦ী প্যানেল হতে না পারে এবং দূনীর্তি অনিয়মের প্রতিবাদ যাতে কেউ না করতে পারে সেজন্য মেধাবী ও প্রতিবাদী সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। কয়েকজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,ঢাকা ক্রেডিট কি বাবু মার্কুজের বাবার ট্রাকের ব্যবসা নাকি পংকজের বাবার পাটের ব্যবসা? যে যা ইচ্ছা তাই করবে।
আসলে তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। সমিতির সাধারন সদস্যদের মতামতের কোন তোয়াক্কা করছেনা। তাদের অপকর্ম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। যেকারনে বাবু-পংকজ চক্র ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এমতাবস্থায় সমবায়ের আলোকবর্তিকা খ্যাত ঢাকা ক্রেডিট রক্ষার জন্যে সমবায় অধিদপ্তর,সমবায় মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় সাধারন সদস্যগণ। বাবু মার্কুজ-পংকজ গিলবার্ট কস্তা চক্রের দুর্নীতি লুটপাটের বিস্তারিত আসছে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *