হামে এক বছরে ‘দেড় লাখ’ মানুষের মৃত্যু

এইমাত্র স্বাস্থ্য

চলতি বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা

 

আজকের দেশ ডেস্ক : ইউরোপ ও আফ্রিকায় হামের প্রাদুর্ভাব নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যেই গত বছর এ রোগে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।
মৃতদের বেশিরভাগই শিশু, যাদের বয়স ৫ এর নিচে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতিকে ‘বিস্ময়কর, ভয়ানক ও করুণ’ বলে অভিহিত করেছেন। টিকার মাধ্যমে সহজেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল বলেও মন্তব্য তাদের।
বিবিসি বলছে, ২০০০ সালের তুলনায় প্রাণঘাতী হামের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৮ সালে যুক্তরাজ্য, আলবেনিয়া, চেক রিপাবলিক ও গ্রিস ‘হাম নির্মূল’ হয়েছে এমন দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। চলতি বছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২৫ বছরের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি হাম আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মাদাগাস্কার ও ইউক্রেইনের বিস্তৃত এলাকায় প্রাণঘাতী এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
হামের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ সামোয়া; স্বাস্থ্যকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য টিকা না নেওয়া শিশুদের পরিবারগুলো ঘরের বাইরে লাল পতাকা ঝুলিয়ে রেখেছে।
হাম আক্রান্তরা শুরুতে ঠা-াজনিত সমস্যায় ভোগেন। তারপর প্রবল জ্বরের সঙ্গে গায়ে লাল লাল দানা দেখা দেয়। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তা উপশমের চিকিৎসা রয়েছে। তবে হামে আক্রান্তদের চোখ ও মস্তিষ্কে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, এই রোগ নিরাময়যোগ্য। যেসব প্রতিষেধক শিশুদের জন্য রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নিরাপদ ও কার্যকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ধারণা অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বজুড়ে হামে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ লাখ; মৃতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪২ হাজার।
তার আগের বছর মৃতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৪ হাজার, আক্রান্ত প্রায় ৭৬ লাখ।
২০১৭ ও ২০১৮ সালের আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বিষয়ক ধারণা স্বাস্থ্য বিশষজ্ঞদের হতভম্ব করে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় টিকা কর্মসূচি থমকে পড়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বলছেন তারা।
সর্বশেষ ২০০০ সালে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৮২ লাখ মানুষ হামে আক্রান্ত, এবং এদের মধ্যে আনুমানিক ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞানীরা সাধারণত, প্রাণঘাতী এ রোগে কতজন আক্রান্ত হয়েছে তার সরকারি হিসাব, জনসংখ্যার আকার, আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের হার, টিকা নেওয়া শিশুর সংখ্যাসহ আরও বেশকিছু সূচক মিলিয়ে সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ধারণা করেন।
গত বছর হামে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি দেশের মধ্যে নাম ছিল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া ও ইউক্রেইনের।
২০১৪-১৬ পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ইবোলা মহামারি এবং লাইবেরিয়ায় ২০১৭ সালের প্লেগে দেশদুটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ধ্বসে পড়ার সুযোগে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কোনো শিশু যদি প্রতিষেধকে সারে হামের মতো এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তা ভয়ানক ব্যাপার। বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল শিশুদের রক্ষার ক্ষেত্রে এটি আমাদের যৌথ ব্যর্থতা, বলেছেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেডরস গেব্রিয়েসুস।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *