আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী

Uncategorized জাতীয় জীবনী বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

আমিনুর রহমান বাদশা ঃ  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার ৮ আগস্ট,  ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহাকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ডাকনাম রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। রেণুর আট বছর বয়সে তাঁর মাতা-পিতা দুজনেই মারা যান।


বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান পিতৃমাতৃহীন এই শিশুটির সঙ্গে ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান খোকার বিয়ে দিয়ে তাঁকে নিজের পরিবারভুক্ত করে নেন। কালে কালে এই শিশুটিই এক প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ, দেশপ্রেমিক নারীতে পরিণত হন।


বিজ্ঞাপন

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু জেল খেটেছেন।বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের বড় একটা সময়, প্রায় ১৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। সেই সময়ে এতগুলো বছর সংসার, সন্তানদের এবং শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা বেগম মুজিবই করেছেন। শুধু তা-ই নয়, কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাঁর নির্দেশাবলি দলের নেতাদের কাছে, ছাত্রনেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এই মহীয়সী নারী। সময় সময় ছাত্রনেতাদের তিনি অর্থ সাহায্যও দিয়েছেন।

সর্বদাই বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ ছয় দফার পক্ষে গণরায় ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হন। আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় এবং পাকিস্তানের সরকার গঠনের জন্য গণরায় পায়।

কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ ভাষণ শুধু নয়; এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ, যা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

৭ মার্চ জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী ভাষণ দেবেন তা নিয়ে চলছিল সবার জল্পনা-কল্পনা। নানাজন তখন নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব তখন বললেন, ‘আপনি কারো কথা শুনবেন না। শুনবেন শুধু নিজের মনের কথা। আপনার মন যে কথা বলতে বলবে, তাই আপনি আপনার বক্তৃতায় উল্লেখ করবেন।’ এমন প্রজ্ঞাবান চিন্তা ও দৃঢ় মনোভাব বঙ্গবন্ধুকে সেদিন অপরিসীম সাহস জুগিয়েছিল।

২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হয়ে যান। তাঁকে ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে৯ মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর বেগম মুজিব তাঁর সন্তানদের নিয়ে এর বাড়ি, ওর বাড়ি আশ্রয়ের জন্য গিয়েছেন। কোথাও আশ্রয় পেয়েছেন, কোথাও পাননি।

এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে সন্তানদেরসহ গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। এখানে তিনি শেখ হাসিনা, রেহানা ও রাসেলসহ পুরো ৯ মাস বন্দিজীবন কাটান। এসময় শেখ কামাল ও শেখ জামাল পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলো, দেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর আসন পেলেন।এত ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে ১৯৭৫ সালে নেমে এলো এক মহাদুর্যোগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট কিছু দুর্বৃত্ত সেনা সদস্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, রাসেলসহ বাড়ির প্রায় সবাইকে হত্যা করে। ওই সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে প্রাণে রক্ষা পান।

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিনে এই মহীয়সী নারীকে আজকের দেশ ডটকম পরিবারের সকল সদস্যের  পক্ষ হতে জানাই আন্তরিক ভক্তি ও  শ্রদ্ধা। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন  মহিয়সী এই নারীকে বেহেশত বসী করুন আমিন।  ছুম্ম  আমিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *