রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যাচাই না করেই তালিকা প্রকাশ
ক্ষমা চাইলেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের প্রথম তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এতে এমন সব ব্যক্তির নাম এসেছে, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, লড়াই করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যদের নামও রয়েছে তালিকায়। অথচ এতে নেই চিহ্নিত অনেক রাজাকারের নাম। এসব কারণে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বরিশাল সদর উপজেলা অংশে ১০৭ জন রাজাকারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরের শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তী ও তাঁর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর নাম রয়েছে।
তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে শহীদ হয়েছেন। অথচ এত বছর পর রাষ্ট্র আমাকে ও আমার মাকে রাজাকারের খেতাব দিল। এই লজ্জা, দুঃখ কোথায় রাখব?
তালিকায় তপন কুমারের নামের পাশে একটি মামলা নম্বর রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো মামলার কথা কখনো শুনিনি। এই কাল্পনিক মামলার নম্বর কোথা থেকে আবিষ্কৃত হলো, কারা করল—কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাজাকারের তালিকায় শহীদ পরিবারের দুই সদস্যের নাম আসার বিষয়টি বরিশালে জানাজানি হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক বলেন, আমরা এমন ঘটনায় বিস্মিত, লজ্জিত। আমরা চাই, এই তালিকা সংশোধন করে ওই পরিবারের সম্মান সুরক্ষা করা হোক।
রাজাকারের তালিকায় অসঙ্গতি প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত রাজাকারদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, সেটা আমরা জানি না। তালিকা প্রকাশের পর অনেকে ফোন করে বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামও তালিকায় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে অন্য কারোর নামের মিলের কারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে, সেগুলো বিবেচনা করা হবে।
রাজাকারের তালিকার অসঙ্গতি নিয়ে অভিযোগ ওঠার আগে থেকেই সবাইকে সাবধান করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তারা বলেন, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের তালিকা প্রকাশের মতো কাজ একটি ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ। এটা শুধু মন্ত্রণালয়, প্রশাসন বা জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে সম্পন্ন করা যাবে না। এই কাজে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তারা বলেন, তালিকাটি প্রকাশের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হলে অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়ত। সেক্ষেত্রে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকত না।
ক্ষমা চাইলেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী : রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে উৎসর্গকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম খান রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ভুলের পরিমাণ বেশি হলে রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ভুলের পরিমাণ কম হলে ভুলবশত যাদের নাম এ তালিকায় এসেছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, ভুলের দায় আমরা এড়াতে পারি না। যেসব অভিযোগ পাব, যাচাই করে সেসব নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। আগামীতে তালিকা প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই করে পরে প্রকাশ করা হবে। ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পেয়েছি, হুবহু তা প্রকাশ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সে সময়ের সরকারি রেকর্ড দিয়েছে, নতুন তালিকা করেনি’
যাচাই না করেই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যাচাই-বাছাই না করেই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যার কারণেই এই ভুল হয়েছে। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দালাল আইনে রাজাকারদের যে তালিকা ছিল, তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনেকের নামের পাশে নোট ছিল, কারো নামে মামলা ছিল, সে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্যই এমন অসঙ্গতি।
আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *