নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর, সকাল ১০ টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এ খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি মাহবুবুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগণসহ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি মাহবুবুল আলম তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দুই দলের বিতার্কিকদের বক্তব্য শুনে আমি অভিভূত।
তিনি বলেন, যে কোনো সৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই সবসময় পাশে থাকবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই কখনই কোনো এ্যাডভোকেসি করবে না। কৃত্রিম সংকট যারা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পণ্যের সংকট সৃষ্টি ও বাজার অস্থিরতার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো। চাহিদা ও যোগানের সাথে মিল রেখে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তিনি প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত এ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতন হবে ভোক্তা এবং সুরক্ষিত হবে ভোক্তার অধিকার এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ব্যস্ততার মধ্যেও অনুষ্ঠানে সময় দেয়ার জন্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আয়োজনের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিকে এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের বক্তব্য শুনে অভিভূত হয়ে বলেন, আমরা চমৎকার ও প্রাণবন্ত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা উপভোগ করলাম এবং আমার মতে আজ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুই দলই বিজয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আমাদের কাজে সরকারি অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা বিশেষত ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে সহযোগিতা করছে। ব্যবসায়ীরাই আমাদের এই দেশকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রাইভেট সেক্টরের একটা বড় অবদান রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সৎ ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। ভোক্তারা যতদিন পর্যন্ত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হবে ততদিন পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অধিদপ্তরের কাজের মূল্যায়ন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সমালোচনা করা হবে। আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সমালোচনাকে স্বাগত জানাব কারণ সমালোচনা কাজের দুর্বল দিকগুলো দেখিয়ে দেয় এবং এই দুর্বল দিকগুলো নিরসনের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
মহাপরিচালক বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS(Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
তিনি ক্ষেত্র বিশেষে সময়ে সময়ে দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানসহ পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারীদের স্বার্থ বিবেচনায় সময়ে সময়ে কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় আবার সে সকল পণ্য আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। দেশের বাজার ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পলিসি গ্রহণ করে।
তিনি জানান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, মিডিয়া আমাদের সমাজের দর্পণ এবং মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কার্যক্রম অনেক সহজে এবং দ্রুত সময়ে ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে যাচ্ছে। এ জন্য তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে একটি ভোক্তাবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার জন্য সকলের সমন্বিত সহযোগিতা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১২/১৩টি সংস্থা বাজার মনিটরিং করে থাকে। তবে শুধু অভিযান পরিচালনা করে বা জেল জরিমানার মাধ্যমে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকটে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে সব সময় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না। চাহিদা ও যোগানের তারতম্যের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অন্যদিকে অসাধু কারবারী, মজুতদার, কালোবাজারি, সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ভাড়া দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমরা কোনোভাবে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয়। তাঁরা বড় বড় পুঁজি নিয়ে বাজারে আসে। লাভ যেমন থাকে ঝুঁকিও তেমনি থাকে। তাই ভ্যাট-ট্যাক্স ব্যবস্থাপণাকে সহনীয় রেখে সরকারকে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে।
আজ “বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিতর্ক করেন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক আরিফুর রহমান, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা ও সাংবাদিক মো. শারফুল আলম।
“বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী”শীর্ষক ছায়া সংসদে বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষের দল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।