নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ বাহিনীর সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হয়।
দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বিজিবি সদর দপ্তরসহ অন্যান্য সকল ইউনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, বিজিবিএম, বিএএম, এনডিসি, পিএসসি উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটের সময় বিজিবি মহাপরিচালক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি চৌকষ দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে। বাদ যোহর বিজিবি‘র সকল মসজিদে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৭৫’র ১৫ই আগস্ট শাহাদাত বরণকারী তাঁর পরিবারবর্গ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত, জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বিজিবি’র উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয় এবং সকল ইউনিটের গেট ও গেট সংলগ্ন সড়কের আশেপাশের এলাকা এবং স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। পিলখানায় আয়োজিত প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য একটি উল্লাসের দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা অর্জনে এ বাহিনীর অবদান ছিল অনবদ্য ও অবিস্মরণীয় । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে বাংলার কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সবাই একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বাহিনীর ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ সহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীরযোদ্ধা শাহাদত বরণ করেছিল যা এই বাহিনীর জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ২২৮ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে লালিত ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই বিজিবি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধসহ বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে আসছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোনো জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা, দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, দেশগঠন ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে বিজিবি’র অনবদ্য ভূমিকা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি’র ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের পালন করার আহ্বান জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য অনবদ্য ভূমিকা রাখবে-আজকের দিনে এটাই বিজিবি মহাপরিচালকের প্রত্যাশা।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গসহ বিজিবি’র স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের জাদুঘর ও চিড়িয়াখানা বিনা টিকেটে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় (আণবিক শক্তি কমিশন এর বিপরীত পার্শ্বে) বিজিবি বাদকদল কর্তৃক বাদ্য পরিবেশন করা হয়।
এছাড়াও মহান বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে বিজিবি’র উদ্যোগে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন আইসিপিতে বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো ‘জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি’ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিজিবি ও বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক দর্শনাথী উপস্থিত ছিলেন।