মামুন মোল্লা (খুলনা) : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার এর সাথে হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং ফোরাম সদস্যবৃন্দের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, আজ শনিবার ৩০ ডিসেম্বর, সকাল ১১ টা ৫ মিনিটের সময় হরিণটানা থানা কনফারেন্স রুমে কেএমপি পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের সাথে হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং ফোরাম সদস্যবৃন্দের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা।
হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং ফোরাম সদস্যবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম ও বিট পুলিশিং এর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর শরীফ হাসান মিলন এবং হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার। বক্তব্যের শুরুতে পুলিশ কমিশনার বিজয়ের মাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি ইতিহাসের মহানয়ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান স্থপতি বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার শত্রু কতিপয় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ সকল পুলিশ সদস্যসহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুলিশ কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। পাশাপাশি অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও নাশকতাকারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামীসহ বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও অপরাধ দমনের অন্যতম কৌশল হিসেবে কমিউনিটি পুলিশিং বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৩ সালে স্বল্প পরিসরে পুলিশ সদরদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক ডিআইজি আপরেশনের অধীনে পৃথক শাখা হিসেবে কাজ শুরু করেছিল কমিউনিটি পুলিশিং। ২০১৪ সালে একজন সহকারি মহাপরিদর্শক এআইজির তত্ত্বাবধানে পাবলিক সেফটি অ্যান্ড প্রিভেনশন শাখার কার্যক্রম শুরু হয়।
এটিই এখন কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিং নামে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে খুলনা মহানগরী এলাকায় ১০২ টি কমিটিতে মোট ১ হাজার ৮০৫ জন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় সভা, পুলিশের কাজে সহযোগিতা ও বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী নির্যাতন, যৌতুক নিরোধ, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এবং সামাজিক মূল্যবোধ সংক্রান্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর হতে এদেশের অবকাঠামো হতে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্সের প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশ কমিশনার মহোদয় বলেন, মাদক বর্তমান সমাজের মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধি দূর করতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে, তা না হলে আমাদের আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। কিশোর এবং যুব সমাজ যেন মাদকের দিকে ধাবিত না হয় সেজন্য তিনি অভিভাবকদেরকে সন্তানদের প্রতি আরও যত্নশীল হওয়ার ব্যপারে আহব্বান জানান। মাদকের গডফাদারদের দমনে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকুলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন কিশোর গ্যাং এবং ইভটিজিং রোধে ইতোমধ্যেই আমরা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি যাতে কোন বাখাটে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উত্যক্ত করতে না পারে। আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন মোবাইলে গেমস ও পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে না পড়ে সেদিকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। আগামী প্রজন্মকে আমরা যদি সঠিক গাইড লাইনে রাখতে পারি তাহলে আগামীর র্স্মাট বাংলাদেশ গড়া সহজতর হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সবশেষে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা জনগণের সেবক। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ শান্তিকামী মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচল, জীবন জীবিকা পরিচালনা করায় সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর।এক্ষেত্রে শান্তি বিনষ্টকারী ও নাশকতাকারীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং যে কোন নাশকতা মোকাবেলায় ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে গণমানুষের পাশে থাকতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমাদের উপর যে পবিত্র দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তা আমাদের সততা, স্বচ্ছতার সাথে পালন করবো ইনশাআল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল, অতিঃ দায়িত্বে ক্রাইম) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সহকারি পুলিশ কমিশনার (সোনাডাঙ্গা জোন) মোঃ আবু নাসের আল-আমিন-সহ হরিণটানা থানা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অনুপ গোলদার; কেসিসির ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ ইফতেখার চালু; ১নং জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান রায়; ১৩ নং গুটিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুর ইসলাম তুহিন; ১নং বিট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত মল্লিক; ২নং বিট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো: আল আমিন খান, ৩নং ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি সুজয় কান্তি মন্ডল ৪নং বিট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: সেলিম রেজা; ৫নং বিট পুলিশিং ফোরামের সভাপতি অভিজিত রায় অভি, হরিণটানা থানা সিপিও এবং বিট ইনচার্জ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।