শের-ই বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার।
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মধুবাগ এলাকায় অবস্থিত শের-ই বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার এর বিরুদ্ধে অধিক ভর্তি ফি গ্রহণ, অতিরিক্ত ফরম পুরণ ফি আদায়,আমানত ফেরৎ না দেয়া, পরীক্ষার পুরাতন উত্তরপত্র বিক্রি, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য,উন্নয়ন ফান্ডের টাকা আত্মসাত ও নারী কেলেংকারিসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এবিষয়ে স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে(মাউশি) অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, তিনি টাকার বিনিময়ে ভূয়া ডক্টরেট ডিগ্রি যোগাড় করে নামের সাথে ডক্টর যোগ করেন। সর্বোপরি তথ্য গোপন রেখে তিনি শের-ই বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে যোগদান করেছেন।
অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় বাড়ি,ঢাকায় একাধিক ফ্লাট ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নিজ বাড়িতে প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মান করেছেন। আর নারীসঙ্গে অঢেল টাকা ব্যয় করেন। অন্যদিকে স্কুল ছুটি হওয়ার পরও মধ্যরাত পর্যন্ত স্কুলে বসে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ করেন। তার সকল অপকর্ম ঢাকতে সবার কাছে বলেন-”স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে”। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তার সব অপকর্ম ঢাকা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন।তার ফেসবুক ও হোয়াটস্এ্যাপ প্রফাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে তোলা ছবি দিয়ে রেখেছেন।
তার পূর্ববর্তি কর্মস্থলের রেকর্ডও ভাল নয়। বগুড়া পুলিশ লাইন হাই স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ থাকা কালে অধিক ভর্তি ফি গ্রহণ, অতিরিক্ত ফরম পুরণ ফি আদায়,আমানত ফেরৎ না দেয়া, পরীক্ষার পুরাতন উত্তরপত্র বিক্রি,গাড়ি ক্রয়, রড বিক্রি. শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও নারী কেলেংকারিসহ অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন। তার এসব দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা তখন বগুড়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচার হয়।
মূলত এর পরেই বগুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। জানাগেছে বগুড়া পুলিশ লাইন হাই স্কুল এন্ড কলেজে দায়িত্ব পালনকালে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারকে ২০১২ সালের ১৯ আগষ্ট সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয় ।
একই সাথে সহকারী পুলিশ সুপার বি-সার্কেল মোহাম্মাদ আশরাফুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বগুড়া পুলিশ লাইন হাই স্কুল এন্ড কলেজের সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে তদন্তে দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রমান হলে একই তারিখ থেকে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।
একটি সূত্র জানায়, চাকরি চলমান না থাকলে এবং পূর্বের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র জমা না দিলে তার চাকরিতে যোগদান অবৈধ। তাছাড়া তথ্য গোপন রেখে চাকরিতে যোগদান চাকরী বিধির পরিপন্থী। এসব বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী জানা যায়, নিয়োগ পরীক্ষায় একজন প্রার্থী ১ম স্থান অর্জন করলেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে বর্তমান অধ্যক্ষকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কারণে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে বাদ দেয়া হয়েছে তা উক্ত কলেজের ক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়। এতে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ নিয়োগ কর্তাদের বিরুদ্ধে। কেননা কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষক তাঁর এমপিও বন্ধ করার জন্য নিশ্চয়ই নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার কথা না।
১২ বছর এমপিওভুক্ত থাকতে হবে, এমন কারণ দেখিয়ে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তৎকালীন যে নিয়োগ বিধি ও শের-ই বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেখানেও ১২ বছর এমপিওভুক্ত’র কথা উল্লেখ ছিলো না।
উক্ত পদটি যে এমপিওভুক্ত নয় তা ডিজি’র মনোনীত প্রতিনিধির চিঠিতে উল্লেখিত। অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার নৈতিকতা বিবর্জিত ও চাকরিচ্যুত লোক, তিনি কিভাবে নিয়োগ পায় ও বহাল থাকে ?
জানা যায়, অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বগুড়া পুলিশ লাইন হাই স্কুল এন্ড কলেজে দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রীর মা-এর সাথে প্রেমে জড়িয়ে পরেন।
বিষয়টি পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে তিনি ওই নারীকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। এ ঘটনায় বগুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম, অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। তার নারী কেলেংকারি এখনো অব্যাহত আছে। অবৈধ উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকাতে লেবানন প্রবাসি এক বান্ধবী’র সাথে লিভটুগেদার করেছেন। আরেক বান্ধবীকে নিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে প্রমোদ ভ্রমন করেছেন। নারী মডেল ও শিল্পীদের নিয়ে ভারত,নেপালে প্রমোদ ভ্রমন করেন।
শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আব্দুস সাত্তারের মত চরিত্রহীন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ পদ থেকে বহিস্কার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি করেছেন অভিভাবকগণ।
এবিষয়ে আব্দুস সাত্তারের বক্তব্য নেয়ার জন্যে তার টেলিফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি। বিধায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।