নিজস্ব প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম) ঃ নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে এবং আরো বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা টার্মিনাল অপারেশনের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র সৌদিআরব বিনিয়োগ করেছে। আরো কয়েকটি দেশ বিনিয়োগের জন্য পাইপলাইনে আছে।এসব বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো বেশি শক্তিশালী হবে । বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছেন। বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে; কারণ তারা জানে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ করলে এর ফল পাওয়া যাবে। দেশ বিক্রি করার চুক্তি আমরা করি নাই, করবো না। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে শেখ হাসিনা কিছু করবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামগ্রিক চিন্তা করেন। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ ক্ষুন হয়-এমন কিছু শেখ হাসিনার সরকার করবে না। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের ৪নং গেইট সংলগ্ন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংযোজিত রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী কন্টেইনার স্ক্যানার স্থাপন ও হস্তান্তর এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল, প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা আরিফুর রহমান খান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএসপিএস কোড কমপ্লাইন্স চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ বন্দরকে আন্তর্জাতিক মহলে নিরাপদ বন্দর হিসেবে আখ্যায়িত করার নিমিত্তে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি স্থাপন করাসহ যুগোপযোগী বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, মংলা, পায়রা এবং অন্যান্য স্থল বন্দর ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। সেখানেও স্ক্যানার বসানো হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের গৃহীত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের রুপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপসমূহের সুফল আনয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে “রপ্তানিমুখী কন্টেইনার স্ক্যানার” যা রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে, বন্দরের কন্টেইনার জট হ্রাস করবে, বৈধ বাণিজ্য সহজতর করবে, অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের রপ্তানি নিবৃত্ত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বন্দর নিরাপত্তা সংস্থা এবং রপ্তানি সহযোগী দেশের চাহিদার সংগে সঙ্গতিপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে ৪নং ও সিপিএআর গেইট সংলগ্ন এলাকায় এ স্ক্যানার দুইটি স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতা এসেয় ২টি রপ্তানিমুখী গেইটে ২টি কন্টেইনার স্ক্যানার, ২ সেট রেডিও একটিভ পোর্টাল মনিটর এবং স্ক্যান্ড ইমেজ মনিটরিং সেন্টার ও রিয়েল টাইম সিসিটিভি ও ইমেজ মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এর ফলে কার্গো রপ্তানির ক্ষেত্রে কার্যকর প্রয়োগ ও স্বেচ্ছা পরিপালন এর মাধ্যমে বিদ্যমান কার্গো পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রচলিত ব্যক্তি কর্তৃক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা সম্ভব হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাস করাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হবে। বন্দরের সার্বিক উন্নয়ন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডলিং করে বন্দরের পূর্বের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে অগ্রগতির নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দর ব্যবহারকারী স্টেকহোল্ডারসহ সকলের সহযোগিতায় বন্দর দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা আরোও সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। স্ক্যানার দুটি স্থাপনের ব্যয় হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। প্রতিটি স্ক্যানার দিয়ে ঘন্টায় ১৫০টি কন্টেইনার স্ক্যান করা যাবে। এগুলো অপারেশনাল কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে।
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতের গ্রীণ পোর্ট “বে টার্মিনাল” এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বে টার্মিনাল চালু হলে ১২ মিটার গভীরতা ও ৬ হাজার কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ অতিসহজেই বার্থিং করতে পারবে। ফলে সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং জাহাজের টার্ণ এরাউন্ড টাইমও কমে আসবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহণে ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এসব ইকুইপমেন্ট পণ্য পরিবহণে সহায়ক হবে যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামের বন্দরের শহীদ মোঃ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বলেন, বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা যে সকল দাবী দাওয়ার কথা বলছেন- সেগুলো সরকারের কথা। সরকার কাউকে গৃহহীন রাখবেনা। কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন, ইন্সেন্টিভ, হাউজ লোন, ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে সরকার কথা বলছে। আপনাদের কথা বলার প্রয়োজন নেই। পোষ্য সন্তানদের যোগ্যতা থাকলে চাকরি পাবে।