নিজস্ব প্রতিবেদক : মানব স্বাস্থ্যের উপর খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ভোক্তা ও বাল্ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ( প্রশিক্ষণ ও প্রচার)(অতিঃ দাঃ) আতিয়া সুলতানা।
আজ বুধবার ২৮ ফেব্রুয়ারি, বিকাল ৩ টায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাকক্ষে মানব স্বাস্থ্যের উপর খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ভক্তা ও বাল্ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত অংশগ্রহণে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের
বিভাগীয় প্রধান (রোগতত্ত্ব ও গবেষণা) প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী ও কনসাল্টেন্ট জনাব মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার) এবং জনাব সোহেল আক্তার, পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন।কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ ও সহকারী পরিচালকগণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, ভোক্তা সাধারণ এবং অংশীজনসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ড. রীনা রাণী পাল কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অনুপুষ্টি সংযুক্তকরণের মাধ্যমে ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। এই কর্মশালা, ভোক্তা সাধারণসহ উপস্থিত সদস্যগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস। খোলা ভোজ্য তেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসাল্টেন্ট মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার।এরপর অধিদপ্তর কর্তৃক খোলা ভোজ্য তেল বিষয়ে পরিচালিত তদারকি কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সোহেল আক্তার অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রসংশা করে বলেন, অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান। কর্মশালায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাজার কমিটিকে সম্পৃক্ত করে উন্মুক্ত স্থানে এ ধরনের এডভোকেসি কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের
বিভাগীয় প্রধান (রোগতত্ত্ব ও গবেষণা) প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ভোক্তা সচেতন হলে তাঁদের অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।তিনি আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এ ধরনের কর্মশালা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। তিনি যার যার অবস্থান থেকে এই কর্মশালার মূল মেসেজ পৌঁছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ভাষা শহীদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সকল সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং সিসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশে ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্য তেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পেট বোতলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। তিনি আরও বলেন, খোলা তেল বন্ধ করে প্যাকিং এর আওতায় নিয়ে আসলে তাতে ভিটামিন এ নিশ্চিত করাসহ কতিপয় ব্যবসায়ীদের অবৈধ চর্চা সনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।আলোচনায় তিনি বলেন, অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে। তিনি জানান বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রাইভেট সেক্টরের অবদান ৮৪%। তাই ব্যবসায়ীদের সরকার সুরক্ষা প্রদান করে কিন্তু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সৎ ব্যবসায়ীদেরও এখন টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তাই অবৈধ মজুদদার, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার কথা বলেন।
পরিশেষে তিনি কর্মশালার লক্ষ্য বাস্তবায়নে জনস্বার্থ বিবেচনায় খোলা ভোজ্য তেল পরিহার করার আন্দোলনে সকলে মিলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক কর্মশালায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
পরিশেষে কর্মশালার সভাপতি ও অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, আজকের কর্মশালা যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কর্মশালা শেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ জেলার নিতাইগঞ্জ বাজারে খোলা ভোজ্য তেল বিষয়ে সচেতনতামূলক তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।