শার্শার এবার নজিরবিহীন ভোটার অনুপস্থিতি ও নাটকীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত

Uncategorized খুলনা জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  (বেনাপোল)  :  শার্শার এবার জাতীয় নির্বাচনের থেকে নজিরবিহীন ভোটার অনুপস্থিতি, পাতানো ভোটারবিহীন এক নাটকীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। এবার শার্শায় চেয়ারম্যান হলেন অস্রব্যবসায়ী, স্বর্নব্যাসায়ী, মতিয়া চৌধুরীর গাড়ী পোড়ানো, আওয়ামীলীগের স্টেজ ভাঙ্গা ব্যক্তি, ভাইসচেয়ারম্যান হলেন, আওয়ামীলীগের তুঘোর নেতা তুজাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, ভূমি দস্যু ব্যক্তি। মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান হলেন বেনাপোল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র, নিখোঁজ কাউন্সিলর তারিকুল আলম তুহিনের স্ত্রী সালমা আলম।


বিজ্ঞাপন

৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে শার্শায় ভোটারবিহীন ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২১মে) সকাল ৮টা থেকে ইভিএম পদ্ধতিতে শুরু হয় এ ভোট গ্রহন, বিরতিহীন ভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহন শেষে এদিন রাতে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ দিকে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই।


বিজ্ঞাপন

উপজেলা ও একটি পৌরসভাতে ১০২ কেন্দ্রে ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১১ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিন্নু (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল (ঘোড়া), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ (আনারস) এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন (দোয়াত কলম)।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সরদার সাহরিন আলম বাদল (টিউবওয়েল), যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মিলন (টিয়া পাখি) এবং শফিকুল ইসলাম মন্টু (চশমা)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। তারা হলেন- বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আলেয়া ফেরদৌস (হাঁস), নাজমুন নাহার (ফুটবল) এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা আলম সালমা (কলস)।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বুরুজবাগান পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা কম। কেন্দ্রের তিন নম্বর কক্ষের ভোট গ্রহণের সামনে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় ষাটোর্ধ সফিউর রহমান বকুলকে। সাদা পায়জামা পরিহিত এই বৃদ্ধের সারা শরীর ঘেমে জবুথবু অবস্থা। মুখে বিরক্ত আর ক্লান্তের ছাপ। ভোট দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের স্বরে বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা ধরে এই কক্ষে বসে আছি। চারবার ভোট দিতে এসেছি; একবারও ভোট দিতে পারিনি। আঙুলের ছাপই মিলছে না। এই বৃদ্ধের ভাষ্য- বারবার হেক্সিসল, সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি, মেরিল দিয়ে ঘষেও আঙুলের ছাপ মেলেনি।

একই কক্ষের পুলিং অফিসার তানিয়া সুলতানা বলেন, বয়স্কদের হাতের আঙুলের ছাপ মিলতে দেরি হচ্ছে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় ৭৪ জনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। হাতের আঙুলে ছাপ না মেলাতে আরও দেরি হচ্ছে। ছাপ না মেলায় এই কক্ষের ২০ থেকে ২৫ ভোটার চলে গেছেন।

কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুর রাশেদ বলেন, ভোট গ্রহণে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। রং মিস্ত্রী, বয়স্ক, কর্মকার শ্রমিক শ্রেণিদের হাতের ছাপ মিলছে না। অনেকেই চলে যাচ্ছেন।

নাভারন রেল বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (নারী) কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল আজম জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিন ঘণ্টায় তিন হাজার ১৬ ভোটের মধ্যে ৩০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি কম। ইভিএমে ভোট গ্রহণে মাঝে মধ্যে হাতের ছাপ না মেলাতে ধীরগতি হচ্ছে।

বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম রসুল রানা বলেন, সাড়ে চার ঘণ্টায় ২৬১৩ ভোটের মধ্যে ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৯৪ ভোট। ভোটারদের উপস্থিতি কম; আবার কোনো কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলাতে ভোট গ্রহণে একটু ধীরগতি।

এদিকে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। এসময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

তিনি বলেন, বয়স্কদের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর অনেকের ভোট হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স্ক ভোটারদের ভোট নিশ্চিতের চেষ্টা করার ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

চেয়ারম্যান পদে মো: সোহরাব হোসেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ৩৭ হাজার ৫৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো: অহিদুজ্জামান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১২ হাজার ২৯১ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: আব্দুর রহিম সরদার তালা প্রতীক নিয়ে ২২ হাজার ৯৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চশমা প্রতীকের শফিকুল ইসলাম মন্টু পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪৫১ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কলস প্রতীকের মোছা: শামীমা খাতুন ৪২ হাজার ৬২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোছা: আলেয়া ফেরদৌস হাসঁ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭ হাজার ৭২৯ ভোট।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *