চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাত, দেশটির সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোটে লক্ষ্য করে গুলি করার জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচল বন্ধ ছিল। বন্ধের ৮দিন পরে কক্সবাজার থেকে এমভি বারো আউলিয়া নামে একটি জাহাজ খাদ্যপণ্য ও যাত্রী নিয়ে শুক্রবার (১৪ জুন) দিবাগত রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছেছে।
গতকাল ১৪ জন, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এমভি বারো আউলিয়া নামে একটি জাহাজ খাদ্যপণ্য নিয়ে সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে রাত সাড়ে ১১টায় পৌঁছেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে এ জাহাজটিতে খাদ্যপণ্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে আটকাপড়া সেন্টমার্টিনের ৩ শতাধিক বাসিন্দাও এই জাহাজে করে দ্বীপে ফিরছেন।’
যা ঘটেছে সেখানে : গত ৫ জুন থেকে নাফ নদীর মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া জলসীমা নতুন করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মিয়ানমারের স্থলভাগে অবস্থানরত বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সঙ্গে নাফ নদের জলসীমায় অবস্থানরত মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে থেমে থেমে গুলি ও গোলাবর্ষণ হচ্ছে। এর কিছু অংশ এসে পড়ছে বাংলাদেশের জলসীমায়। এ সময় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে গুলিও এসে পড়ে ট্রলারে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, পূর্বদিকে মিয়ানমারে রাখাইনের মংডুতে হাসসুরাতা ও মেরুল্ল্যা গ্রাম থেকে বুধবার দিনভর ব্যাপক মর্টারশেলের শব্দ পেয়েছেন তারা। এতে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এ সময় আকাশে যুদ্ধবিমান এবং সাগরের জলসীমানায় দেখা যায় মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ। এরপর থেকেই দ্বীপবাসী খুবই আতঙ্কে রয়েছেন।
মিয়ানমার হয়ে চলে আমাদের নৌযান : পর্যটকবাহী জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিকরা জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচরে চর জেগে যাওয়ায় দেখা দেয় নাব্যতা সংকট। এই নাব্যতা সংকটের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে গত ১০ বছর ধরে জাহাজ, ট্রলার ও স্পিডবোটগুলোকে যাতায়াত করতে হয় মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া জলসীমা দিয়ে। একেবারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই জলসীমা অতিক্রম করতে সময় লাগে ৩০ মিনিটের বেশি। কিন্তু এতদিন ধরে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ দিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটের সব নৌযান চলাচল করলেও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে চলতি বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুরু হয় সংঘাত। যার জের ধরে এই মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া জলসীমায় চলছে গোলাগুলি।
শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচরে চর জেগে যাওয়ায় মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া চ্যানেল ৩০ থেকে ৪০ মিনিট তাদের অভ্যন্তর দিয়ে জাহাজগুলোকে যেতে হয়। কিন্তু চলতি বছর থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত শুরু হয়। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে মৌসুমের আগেই নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আর বিকল্পপথ ইনানী ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচল করা হয়। মিয়ানমারের সংঘাত এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।