রামপুরা ও খিলগাঁও থানা এলাকায় ফুটপাথে ৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজি :  ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রামপুরা ও খিলগাঁও থানা এলাকায বিভিন্ন অলিতে গলিতে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন হাজার হাজার হকার। এরা রামপুরার ব্যস্ততম সড়ক ছাড়াও ফুটপাথ দখল করে বিভিন্ন ধরনের পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। রামপুরা ও খিলগাঁও থানা এলাকায় হাজার হাজার হকারের বক্তব্য হচেছ তারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছে। হকারদের ভাষায় টাকা নি”চেছ পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বলয়ে পরিচয়ধারী চেনা লোকজন। তবে এ সকল হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিলেও এ টাকার দায় নিতে চায়না রাজনৈতিক দলের কেনো নেতা বা থানা পুলিশের কেউ-ই।


বিজ্ঞাপন

আবার গণমাধ্যমে এ বিষয় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মেইন সড়কের কিছু দোকান সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে অলিগলির সব হকার ঠিক থাকে সব সময়। এক ঘন্টা যেতে না যেতেই আবার চালু করেন দোকানগুলো। হকারদের সাথে চোর-পুলিশ খেলার দৃশ্য অনেকটা সিনেমাটিক  মনে হয়। হকারদের দৌড়াত্ম্যে পথচারীদের যাতায়াতে যেমন বিঘœ ঘটে তেমনি স্কুল কলেজ পড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ নিয়ে এলাকায় মাঝে মধ্যে সাধারণ পথচারীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।


বিজ্ঞাপন

জানাগেছে রামপুরা ও খিলগাঁও থানা এলাকায় একাধিক স্পটে চাঁদা আদায় করছেন আলাদা আলাদা পুলিশ নিয়ন্ত্রিত একটি চক্র। এর মধ্যে উল্লোখযোগ্য বড় স্পট মেরাদিয়া বাজার ,তালতলা সুপার মার্কেট ফুটপাত ,মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে মেইন সড়ক থেকে খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি,মালিবাগ কাঁচা বাজার গলি ,আবুল হোটেলের উল্টোপাশে চৌধুরিপাড়া থেকে রামপুরা বেটারলাইফ হাসপাতাল ,আবার টিভিরোড ময়দার মিল, সেখান থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন পর্যন্ত ,কুঞ্জবন কাঁচাবাজার ,হাজিপাড়া বউবাজারের মাছ ও কাঁচাবাজার এর চাঁদা আদায় করছেন বিভিন্ন নামের ব্যক্তিরা।

এদিকে রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় প্রতি বুধবার হাট বসে।

সেখানে ওই দিন আবাসিক এলাকার এভিনিউর রাস্তাঘাটসহ প্রায় সব রাসÍায়ই ২ হাজারের বেশি হকার বসেন। এসব হকার ছোট চৌকি ও নির্দিষ্ট ৪ থেকে ৬ ফুট যায়গায় বসেন। এসব চৌকি ও রিকশাভ্যানে কাপড়চোপড় , প্রসাধনী ,জুতা ,বিছানার চাদর ,মশারি ,খেলনা ,ফলমূল ,শরবত.হালিম,ফুসকা,গৃহস্থলী জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা।

তবে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের চার হাত আয়তনের একেকটি চৌকি বা রিকশাভ্যান বসতে অগ্রিম দিতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর পন্যের ধরন অনুযায়ী দৈনিক একজন হকারকে দিতে হয় ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। বুধবার ছাড়াও সড়কগুলোতে শাক সবজি ও মাছ মুরগি ও মাংসের দোকান বসে। ওই সব দোকান থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ওঠান চাঁদাবাজরা।

কে বা কারা নেন এ টাকা এমন প্রশ্নে মেরাদিয়া বাজারের ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন রিয়াজ,আসিফ .রুবেল ,সজিব ,ও আলামিন। আর তাদের দলপতি হিসাবে আছেন খালেদ ও কাউন্সিলর এবং খিলগাঁও থানা পুলিশ। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে লাইনম্যান ও তার সহযোগীরা মিলে মারধর করেন। মালামাল ফেলে দেন।

সরেজমিনে গিয়ে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি গোষ্ঠী ও থানা পুলিশ ও পুলিশ বক্স মিলে লাইনম্যান সরদার ও লাইনম্যান নিয়োগ দেন।

কোন কোন এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকায় অন্তত তিন লাখ হকার রয়েছেন।

এলাকাভেদেও পন্যের ধরন অনুযায়ী একজন হকারের কাছ থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা সর্বো”চ চাঁদা তোলা হয বলে হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির হিসাবে আড়াইলাখ হকারের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ৪০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে ফুটপাথ থেকে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা মাসে ৩০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী অবৈধ হকার্স সংগঠন ও লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা অসাধু পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশে চাঁদা তোলেন।

সিটি কর্পোরেশন মামলা করলেও তারা গ্রেফতার এড়িয়ে চাঁদাবাজি করে যা”েছন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা¯নেওয়ার দাবি জানান এম এ কাশেম।

সরেজমিনে দেখাগেছে মালিবাগ সুপার মার্কেটের সামনে মেইন সড়ক থেকে খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি পর্যনÍ চাঁদা তোলেন খোকন নামে এক ব্যক্তি। এ এলাকায় অনুমান ৭০টি ভাসমান দোকান রযেছে। একেকটি দোকান থেকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা তোলেন এ টাকা রিসিভ করেন রামপুরা থানা পুলিশ।

আর মালিবাগ কাঁচা বাজার গলিতে নাঈম নামে এক যুবক এ্কই নিযমে চাঁদা তোলেন তার অধিনে দোকান রয়েছে ৭০/৮০টি। আবুল হোটেলের উল্টোপাশে চৌধুরিপাড়া থেকে রামপুরা বেটারলাইফ হাসপাতাল পর্যন্ত কালাম নামে এক চা দোকানি ১৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন আর টাকা রিসিভ করেন রামপুরা থানা পুলিশ। এ এলাকায় মোট ৫০/৬০টি দোকান রযেছে। হাজিপাড়া বউ বাজার মাছ ও কাঁচাবাজারের উজ্জল নামে এক ব্যক্তি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন।

এখানে অনুমান ১৩০ থেকে ১৫০টি ভাসমান দোকান রয়েছে। আর এ চাঁদার টাকা রিসিভ করেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা মনির চৌধুরী। বেটারলাইফ হাসপাতাল থেকে টিভি রোড ময়দার মিল পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সালাউদ্দিন নামে এক যুবক। এখানে একেকটি দোকান থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা তোলেন। আর এ টাকা রিসিভ করেন সরকারি দলের এক প্রভাবশালী নেতা আমিনুল ইসলাম।

পূর্বরামপুরা ১৯ আম্বিয়া পয়েন্ট মার্কেটের সামনে মেইন সড়কে সাজু নামে এক নৈশপ্রহরী একেকটি দোকান থেকে ৩২০ টাকা চাঁদা তোলেন। এখানে মেইন সড়কে ৮টি জুতার ভাসমান দোকান রযেছে। আর টাকা রিসিভ করেন সরকারি দলের প্রভাবশালী এক নেতা আইউব আকরাম মুকুল।

টিভি রোড থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভির গেট পর্যন্ত আয়ূবালি নামে এক ব্যক্তি একেকটি দোকান থেকে ১৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন আর টাকা রিসিভ করেন রামপুরা থানা পুলিশ। একই নিয়মে কুঞ্জবন কাঁচাবাজার থেকে চাঁদা তোলেন পুলিশ নিয়ন্ত্রীত লাইনম্যান। তার নাম জানা যায়নি। একই নিয়মে তালতলা সুপার মার্কেটের ফুটপাতে চাঁদা তোলেন রাজনৈতিক ও পুলিশ বলয়ে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানাযায় রামপুরা থানা এলাকায় মাসিক হারে প্রায় তিনকোটি টাকা চাঁদা আদায় করছেন এ চক্রটি।

মালিবাগ হকার নাঈম ও খোকনের কাছে জানতে চাইলে খোকন বলেন ,আমরা চাঁদা তোলার পর ডিউটিরত পুলিশ আমাদের কাছ থেকে রিসিভ করেন এবং নাঈম বলেন ভাই আপনাদের কোন তথ্য জানানো যাবেনা। আপনাদের তথ্য দিলে আমাদের সমস্যা হবে। বড় ভাইদের নিষেধ আছে। চা দোকানি কালামকে একাধিকবার ফোন দিলেও সে রিসিভ করছেন না। বউ বাজার উজ্জল মিয়াও একই বক্তব্য দেন। সালাউদ্দিণ আইউব আালি ,সাজু এক্কই বক্তব্য দিয়ে জানান আমাদের নিষেধ আছে,আমরা কিছুবলতে পারবনা।

এ বিষয় রামপুরা ট্রাফিক জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলামের কাছে চাঁদাবাজির অনিয়ম জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম কে  জানান,আমার এ বিষয জানা নাই,তবে আপনি সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে থানার ফোর্স নিয়ে আটক অভিযান চালাব।

রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন তিনি বিষয়টি জানেনা তাহলে খতিয়ে দেখবে এবং ঘটনার সত্যতা পেলে দ্রæত ব্যবস্থা নিবেন।

এদিকে ডি এনসিসির রামপুরার নির্বাচিত কাইন্সিলর মোঃ লিয়াকত আলির মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ  করেন নাই। এবং তাঁর মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন উত্তর দেন নাই। দক্ষিণ বনশ্রী মেরাদিয়া বাজারের ফুটপাথের অনিয়ম ও চাঁদাবাজির বিষয় জানতে চাইলে খিলগাও থানার অফিসার ইনচার্জ গণমাধ্যম কে  জানান, চাঁদাবাজির বিষয় আমার জানা নেই তাহলে ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *