ডেস্ক রিপোর্ট : চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বুধবার একদিনে ২৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। সেখানে এই ভাইরাসে একদিনে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। আর এদের মধ্যে ২৪২ জনই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। এর ফলে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৩৫৭ জনে। চীনা স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স ও আল জাজিরা।
বৃহস্পতিবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রদেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১০ জনে। চীনের মূল ভূখ-ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ১৩৫৫ জন। এছাড়া মধ্যে চীন ছাড়া হংকং ও ফিলিপাইনে দুজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
বুধবার হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও ১৪ হাজার ৮৪০টি ভাইরাস সংক্রমণের বিষয় নিশ্চিত করেছে, যা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থলে মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ২০৬ জন।
হুবেইতে ৩৩ হাজার ৬৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৩৩৭ জন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। ৩৩ হাজার ৪৪১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন এবং তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙর করা ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামক প্রমোদতরীতে। বিলাসবহুল ওই নৌযান তিন হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে এখন কোয়ারেন্টাইনে। বুধবার পর্যন্ত সেখানে থাকা ১৭৫ জনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মহামারি আকার ধারণ করে এই ভাইরাস। ভাইরাসটি চীনের ৩১ প্রাদেশিক পর্যায়ের অঞ্চল ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবং প্রাণহানি বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় অধিকাংশ দেশ।
স্বাস্থ্য কমিশন আরও জানিয়েছে, সোমবার নতুন করে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে হেইলংজিয়াং, আনহুই ও হেনানা প্রদেশ এবং বেইজিং ও তিয়ানজিনের মতো শহরেও।
চীনা প্রেসিডেন্ট শিজিনপিংকে সোমবার প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে দেখা গেছে। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমবারের মতো তাকে প্রকাশ্যে দেখা গেল।
এদিকে গত রোববার স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০০২-০৩ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্সকেও (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছাড়িয়ে গেছে। সে সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়, আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৯৮ জন।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়ে হংকং ও ফিলিপাইনে মারা গেছে দুইজন।