পানির গভীরতা কম
বিশেষ প্রতিবেদক : পদ্মার ওপারে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল মিলিয়ে ২১টি জেলার জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ২০১৬ সালে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ পরিকল্পনায় পায়রায় একটি স্থায়ী লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ ছিল সরকারের। কিন্তু পায়রাবন্দরে পানির গভীরতা কম থাকায় আপাতত সেখানে টার্মিনাল তৈরি সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টোকিও গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং সলুশনস করপোরেশন (টিজিইএস) ও নিপ্পন কোই কোম্পানি (এনকে)। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত পায়রায় এলএনজি টার্মিনাল তৈরি সম্ভব নয়।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দুইটি বলছে, পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর এলাকায় ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল তৈরির জন্য চ্যানেলের ন্যূনতম গভীরতা ১২ মিটার না থাকায় বর্তমানে সেখানে টার্মিনাল তৈরি সম্ভব হবে না। তবে, পায়রাবন্দর এলাকার রাবনাবাদ চ্যানেল কস্ট শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে টার্মিনাল তৈরি করা যেতে পারে।
পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছর বেলজিয়ামের একটি কোম্পানির সঙ্গে বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলের খনন কাজের চুক্তি করে। ওই চুক্তিতে বন্দরে ১২ মিটার গভীরতা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এখন বন্দর চ্যানেলে সাড়ে চার মিটার থেকে আট মিটার গভীরতা রয়েছে।
ফলে বন্দরে সাড়ে চার মিটার গভীরতায় বড় জাহাজ আসতে পারে না। এলএনজি টার্মিনালের জন্য ১২ থেকে ১৬ মিটার গভীরতার প্রয়োজন, যা পায়রাবন্দরে নেই।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি বন্দর রয়েছে। পায়রা ছাড়া অন্য বন্দরটি হচ্ছে মোংলা। মোংলায়ও গভীরতা সংকট রয়েছে। মোংলায় সর্বোচ্চ ৭ থেকে আট মিটার গভীরতায় জাহাজ আসতে পারে। ফলে এখানেও এলএনজি টার্মিনাল তৈরি সম্ভব নয়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে কেবল ভোলায় গ্যাস রয়েছে। তবে ভোলার গ্যাস দিয়ে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। এর বাইরে ভোলা থেকে ব্যাপকভাবে গ্যাস তুললেও তা আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভোলার গ্যাস আনতে হলে পানির মধ্য দিয়ে পাইপলাইন করতে হবে। যা নির্মাণ করাকে কঠিন বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। এছাড়া, ভোলার গ্যাসের জন্য পাইপলাইন তৈরি হলে তা কতটা অর্থনৈতিকভাবে উপযোগী হবে, সেই প্রশ্নও রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল তৈরি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে শেষ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর এলাকায় এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট বা আগ্রহপত্র আহ্বান করা হয়। দশটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়। দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন করে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। এরপর তাদের রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল বা অনুরোধপত্র তৈরি করতে বলা হয়। অন্যদিকে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাপানের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। কোম্পানির প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। এখন উচ্চপর্যায় সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী করবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৪১ সালে আমাদের গ্যাসের যে মজুত আছে তা ফুরিয়ে যাবে। এরপর থেকে আমদানি করা জ্বালানি দিয়েই চলতে হবে। গ্যাসের এই আসন্ন সংকটের কথা বিবেচনা করেই সরকারের পক্ষ থেকে এলএনজি ও কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে, এখনই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস নেই। সেখানে গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি না সরবরাহ করা হলে সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর সেখানে গ্যাস সরবরাহ করতে হলে পায়রায় একটি ল্যান্ডবেইজড এলএনজি টার্মিনাল করা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।