জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা শুশুড়কে বাবা বানিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুশুড়কে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘ সাড়ে আট বছর প্রকাশ্য আসায় এলাকায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে মঙ্গলবার (২২) অক্টোবর দুপুরে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের জুলারখুপি গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এর ছেলে সেনা সদস্য খায়রুল ইসলাম খোকনের সাথে মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর সাথে ২০১০ সালে বিবাহ হয়। ২০০৭ সালে বিবাহের পুর্বে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সময় তার বাবা মার নাম ঠিকানা সঠিক দিয়ে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে ২০১১ সালে নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে জন্মদাতা হিসেবে পিতার নাম না দিয়ে শুশুড়ের নাম পিতা বলে দাবী করে রেজিস্ট্রেশন করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৷ পরে তারপর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তার পিতার নামের পরিবর্তে শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র করেন।
এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান পরিবারে দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে নাম রহিমা আক্তার ও দ্বিতীয় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম@খোরশেদ এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম@খোকন মিয়া । খোকন বর্তমানে সেনা সদস্য৷ আর তার স্ত্রী মাফিয়া আক্তার মিতু সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। বিবাহের পুর্বে রায়েরছড়া সরদাবাড়ী মডেল একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন মাফিয়া আক্তার মিতু ।
জুলারখুপি এলাকার উজ্জ্বল জানান, কাগজপত্রে তারা ভাই বোন। ইসলামিক ভাবে আপন ভাইয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন তারা । এতে তাদের ঘরে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। বিষয়টি নিয়ে আমাদের এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বিচার কামনা করে অনেকেই জানান, নিজের বাবার নাম বাদ দিয়ে শ্বশুর কে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে শিক্ষক মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছে তার কাছ থেকে কোমলমতি শিশুরা কি শিখতে পারে। জালিয়াতির এমন ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর ভাসুর মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, মাফিয়া খাতুন মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।সে তার কাগজপত্রে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে না।আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তার জন্মদাতা হতে পারে না।
এদিকে অভিযোগ নিয়ে মাফিয়া আক্তার মিতুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হলে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানান , ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারী থেকে মাহিয়া আক্তার সহকারী শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছে৷ তার যোগদান পত্রটি আমাদের কাছে আছে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মেহেদী হাসান জানান, অসাধু লোভীদের ষড়যন্ত্রের কারণেই বার বার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা বিতর্কিত হচ্ছেন। তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ হলো এই শিক্ষিকা মিতু। মিতুর এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত মুক্তিযোদ্ধারাও। আমরা এই লোভী শিক্ষিকার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি। সেই সাথে যাচাই বাছাই না করেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা চাকরি দিয়েছেন তাদেরকেও তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খান এ প্রতিবেদককে জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থাকায় অভিযুক্ত ওই সহকারি শিক্ষিকার কাছে আরও তথ্য চাওয়া হয়েছে। এরপর পরিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান৷
এ দিকে মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আবু শাহীন মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে জানান, এ বিশয়ে তদন্ত রিপোর্ট আসা মাত্রই সচিব মহোদয়কে অবগত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷