স্পোর্টস রিপোর্টার : মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তামিম ইকবালের অনবদ্য ১৫৮ রানের ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রান সংগ্রহ করেছে টাইগাররা। জিততে জিম্বাবুয়েকে করতে হবে ৩২৩ রান। ব্যাট হাতে তামিম ইকবাল ক্যারিয়ার সেরা ১৫৮ রান করেন। ১৩৬ বল খেলে ২০ চার ও ৩ ছক্কায় এই রান করেন তিনি। ৬ চারে ৫৫ রান করেন মুশফিকুর রহিম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪১ ও মোহাম্মদ মিথুন অপরাজিত ৩২ রান করেন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান তোলেন তারা।
শুরু থেকেই ব্যাট চালিয়েছেন তামিম। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস রান আউট হয়ে ফিরে যান মাত্র ৯ রান করে। সেটিও তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে। কার্ল মুম্বার করা তৃতীয় বলটি সোজা ব্যাটে খেলেন তামিম। তামিমের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল মুম্বার হাত ছুঁয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প এলোমেলো করে দেয়। বল যখন স্ট্যাম্পে লাগে তখন পপিং ক্রিজের বাইরে ছিল লিটনের ব্যাট। চেষ্টা করেও তিনি লাইনের ভেতরে ব্যাট নিয়ে যেতে পারেননি।
লিটন কুমার দুর্ভাগ্যজনক আউট হওয়ার পর রান আউটে কাটা পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একাদশতম ওভারে ওয়েসলি মাধভেরের করা দ্বিতীয় বলটি শান্তর প্যাডে লেগে শর্ট ফাইন লেগে চলে যায়। শান্ত রান নিতে চাননি। তামিম দৌড়ে চলে যান স্ট্রাইকিং প্রান্তে। অনিচ্ছা সত্বেও শান্তকে বেরিয়ে আসতে হয়। টেলরের হাত ঘুরে বল যায় মাধভেরের হাতে। তিনি উচ্ছ্বাস নিয়ে ট্যাম্প ভাঙেন। শান্ত মাত্র ৬ রান করে ফেরেন।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ফিফটি এসেছিল তামিমের। অবশেষে ৯ মাস পর আরেকটি ফিফটি পেলেন টাইগার এই ওপেনার। তার ব্যাটিংয়ের ধরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তামিম এবার করলেন তার নিজস্ব আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ফিফটি ছুঁয়েছেন মাত্র ৪২ বলে, মেরেছেন ১০টি চার।
তামিমের সঙ্গে আক্রমণাত্মকভাবে ব্যাটে চালালেন মুশফিকও। ৪৭ বলেই অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন টাইগার ডিপেন্ডবল ব্যাটসম্যান। তবে হাফ সেঞ্চুরি তুলেই মারমুখি হয়ে যান মুশফিক। ফলাফল ৫ রান যোগ করেই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৫০ বলে ৬ চারে মুশফিকের সংগ্রহ ৫৫ রান।
দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ানডেতে আগের সেই তামিমকে দেখা যাচ্ছে না। সেই আগ্রাসী তামিম হঠাৎ করেই কেমন জানি গুটিয়ে গেলেন। ক্রিজে এসে টুকটুক করতে করতেই নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতেন। শেষ শতকটিও এসেছিল প্রায় ১৯ মাস আগে। এরপর ৪টি অর্ধশতকের দেখা পেলেও সেটিকে সেঞ্চুরিতে রুপ দিতে পারেননি তামিম। উল্টো মন্থর গতিতে খেলে সমালোচনায় বিধ্বস্ত হন। অবশেষে ১৯ মাস পর নিজের ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে ফেললেন তামিম। ৯৫.২৮ স্ট্রাইক রেটে সেঞ্চুরি তুলতে তামিম খেলেছেন ১০৬ বল।
তামিম ইকবালের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটি গড়ে বিদায় নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ২৫৮ রানের মাথায় চার্লটন টিসুমার বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ওয়েসলি মাধভেরের দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন তিনি। যাওয়ার আগে ৫৭ বল খেলে ৩ চারে ৪১ রান করে যান।
ওয়ানডেতে এতদিন তামিমের সর্বোচ্চ রান ছিল ১৫৪। বুলাওয়েতে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। এটিই ছিল এতদিন পর্যন্ত তার এবং বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। অবশেষে ১০ বছর পর নিজের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজেই তামিম। প্রতিপক্ষ সেই জিম্বাবুয়ে।
১০৬ বলে সেঞ্চুরি, ১৩২ বলে ১৫০। অর্থাৎ সেঞ্চুরির পরের ফিফটি তুলে নিতে তামিম খরচ করেছেন মোটে ২৬টি বল। নিজের দিনে তিনি কি করতে পারেন দেখিয়ে দিলেন সবাইকে। তবে ১৩৬ বল খেলে ১৫৮ রানেই সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তামিমকে।
সেট ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর শেষ দিকে উইকেট পড়েছে দ্রুত। ফিরে গেছেন মেহেদী মিরাজ (৫), মাশরাফি বিন মুর্তজা (১), তাইজুল ইসলাম (০)। তবে মিঠুন ঝড়ো গতিতে খেলে স্কোরবোর্ড আরও সমৃদ্ধ করেছেন। ১৮ বলে অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। ৩টি চারের সঙ্গে মারেন একটি ছয়।
রোববার সিলেটে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের দেয়া ৩২২ রানের জবাবে মাত্র ১৭০ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। আর এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড টাইগারদের।
আজকে জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। তবে এই ম্যাচটি মুশফিকুর রহিমের জন্য ম্যাচটি বিশেষ কিছু। জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলে মুশফিক নিজেই পাবেন শততম জয়ের স্বাদ।
দলে দুটি পরিবর্তন এনেছে স্বাগতিকরা। মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফউদ্দিন বাদ পড়েছেন। একাদশে ঢুকেছেন আল আমিন ও শফিউল ইসলাম।
জিম্বাবুয়ে দলেও এসেছে দুই পরিবর্তন। অভিজ্ঞ শেন উইলিয়ামসন ফিরেছেন দলে। ক্রেগ আরভিনের ফেরার কথা থাকলেও তিনি সুস্থ হননি। ক্রিস এমপফুর জায়গায় কার্লটন টিসুমা আছেন দলে। এছাড়া জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চামু চিবাবা ইনজুরির কারণে নেই দ্বিতীয় ওয়ানডের দলে।
বাংলাদেশ একাদশ:
লিটন দাস (উইকেটকিপার), তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তাইজুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম ও আল আমিন।
জিম্বাবুয়ে একাদশ:
থিনাসি কামুনহুকামি, রেগিস চাকাভা, ব্রেন্ডন টেইলর, সিকান্দার রাজা, শন উইলিয়ামস রিচমন্ড মুতুমবামি, টিনোটেন্ডা মুতুমবজি, ডোনাল্ড ট্রিপানো, ওয়েলস মেদহেভেরা, চার্ল মুম্বা, কার্লটন টিসুমা।