সুমন হোসেন, (যশোর) : শেওলা ও কচুরিপানা কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের প্রদীপ বিশ্বাসকে ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধার রঞ্জন রায় পোদ্দার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আবু তাহের মো: মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া সচিব মো: মাহবুব উল আলম এবং বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুজান ভাইজ উপস্থিত ছিলেন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক দেবব্রত চক্রবর্তী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ডা. বিধার রঞ্জন রায় পোদ্দার ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্মাননা’ ক্রেস্ট তুলে দেন। ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে প্রদীপ বিশ্বাস এবং প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে আন্ডারপ্রিভিলেজড চিলড্রেন’স এডুকেশনাল প্রোগ্রামস (ইউসেফ) বাংলাদেশ সম্মাননা পেয়েছে। প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, “আমরা ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। বছরের ৯ মাস আমাদের পানির নিচে থাকতে হয়।

এ সময় শেওলাতে ভর্তি থাকে আমাদের জলাশয়গুলো। এ কারণে শেওলা ও কচুরিপানা নিরসনে আমার এ প্রচেষ্টা একটি আবিষ্কারে পরিনত হয়। ভাবতে পারিনি, আমার এই আবিষ্কার দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।” প্রদীপ বিশ্বাসের ছেলে জনতা ব্যাংকে কর্মরত রনজিৎ বিশ্বাস বলেন, “বাবার সম্মাননা প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত।”
প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের মৃত প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। বাবা ছিলেন অভয়নগর উপজেলার একটি জুট মিলের মেকানিক। বাবার হাত ধরে এ পথে আসা প্রদীপের। সুন্দলী বাজারে কুচলিয়া অংশে রয়েছে প্রদীপের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের দোকান। শেওলা ও কচুরিপানা কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন তিনি। যে যন্ত্র ১০০ জন শ্রমিকের এক মাসের কাজ করতে পারে মাত্র একদিনে।
ইন্টারনেটে এ যন্ত্র দিয়ে কচুরিপানা কাটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বিষয়। ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে কচুরিপানা কাটার মেশিন আবিষ্কার করা হয়েছে। মেশিন চলছে আর কচুরিপানা কেটে দুই পাশে পড়ছে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপনাভর্তি জলাশয়ের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছে ডিঙ্গি নৌকা।
প্রদীপ জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, এঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে যন্ত্র বানালেও ঘন কচুরিপানা কাটতে গেলে মেশিন বন্ধ হয়ে যেত। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও কচুরিপানা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন, ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে যন্ত্রটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মাসখানেক কাজ করে তৈরিকৃত যন্ত্র কচুরিপানা কাটার উপযোগী হয়। এই যন্ত্র দিয়ে কুচি কুচি করে কাটা কচুরিপানা দিয়ে জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।