তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র ডিজিএম কোম্পানী অ্যাফেয়ার্স সৈয়দা আতিয়া বিলকিস (মিতু)।
নিজস্ব প্রতিবেদক : তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র ডিজিএম কোম্পানী অ্যাফেয়ার্স সৈয়দা আতিয়া বিলকিস (মিতু) কোড নং-০০৭৫৬ দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত একই কর্মস্থলে কর্মরত থেকে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানীর স্বার্থ বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছেন।কোম্পানিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডির কাছে নানা অনিয়ম দুর্নীতি তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেছেন মোঃ আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সৈয়দা আতিয়ার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়, বর্তমানে বসবাস করেন ইস্কাটনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। গত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রেজিঃ নং- ঢ ০১৭২০/৮৫ এর সহ-সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন।
২০২০ সালের এসিআর -এ পদোন্নতির সুশারিশ না থাকা সত্ত্বেও দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক এবং তখনকার পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীকে দিয়ে তখনকার তিতাসের এমডি মোস্তফা কামালকে চাপ দিয়ে পদোন্নতি দিতে বাধ্য করেন। ডিজিএম পদে পদোন্নতির পর শুরু করেন অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি। তাদের দিয়ে তদবির করিয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চাপে রাখতেন।তিনি ২০২০ সালে ডিজিএম হওয়ার আগে দীর্ঘ ২৫ বছর নিয়মিত প্রতিদিন অফিসে আসতেন না।গত ২০২০ সালে ডিজিএম পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ১২ টার আগে কোনদিনও সে অফিসে আসেন না।
সৈয়দা আতিয়া১৯৯৫ সালের ৩০ মার্চ তিতাস গ্যাসে যোগদান করেন। চাকুরীতে যোগদানের পর হতে কোনদিনই নিয়মিত অফিসে আসতো না।মাঝেমধ্যে অফিসে এসে হাজিরা খাতায় কয়েকদিনের স্বাক্ষর একত্রে করতেন। এবিষয়ে যখন যে বস কথা বলেছেন,তার সাথেই খারাপ ব্যবহার এমনকি গালাগালি করতেন। এছাড়া উর্ধ্বতন প্রভাবশালী কাউকে দিয়ে শাসিয়ে বসকে দাবিয়ে রাখতেন।এছাড়া অফিসে এসে দুই ঘন্টা কাজ করে আবার তড়িঘড়ি করে চলে যান।১২টার পর অফিসে এসে দুর্নীতির ফন্দি আটার পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেফিরে সময় কাটান।এছাড়াও “সংস্থাপন বিভাগের” দায়িত্ব পালনের সময় এল এফ এ ছুটি নেওয়ার জন্য আবেদন করলে ২৫ কর্মচারীর কাছ থেকে ৫০০/ টাকা হারে ঘুষ নেন আতিয়া বিলকিছ।”
তিতাস গ্যাসের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি প্রয়াত কাজিম উদ্দিনের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৬০০ কর্মচারীকে সুবিধা জনক স্থানে বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রয়াত সিবিএ সভাপতি কাজিম উদ্দিনের মধ্যস্থতায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ডিজিএম আতিয়া বিলকিস এর মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গত সরকারের আমলে আমি তিতাস গ্যাসের ৬০০ কর্মচারীকে বদলি করেছি যা তিতাস গ্যাসের ইতিহাসে একটি মাইলফলক, অথচ এর আগে মমতাজ বেগম নামে এক ডিজিএম একজন কর্মচারীকে ট্রান্সফার করার কারণে তার শাড়ি খুলে ফেলতে চেয়েছিল সিবিএ নেতারা। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের হাতে একটি অডিও রেকর্ড পৌঁছেছে।
তার বিরুদ্ধে অর্থ-আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোপূর্বে নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে পেট্রোবাংলায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়।কিন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর থেকেও রাতারাতি আওয়ামী রূপ পাল্টিয়ে বর্তমানে তিনি বিএনপি বনে গেছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সৈয়দা আতিয়া ৪টি পদোন্নতি ও তিনটি বৈদেশিক প্রশিক্ষণসহ তিতাস গ্যাস থেকে নানা সুবিধা নিয়েছে বিগত সরকারের আমলে।শফিউল্লাহ ভূইয়া নামে একজন চাকরিচ্যুত কর্মচারীকে দিয়ে ফেসবুকে বর্তমান এমডিকে নিয়ে টাকার জন্য অভিযান চালায় বলে কুৎসা রটায়।
দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সৎ, দক্ষ,কর্মঠ ও নিবেদিত প্রাণ তিতাস গ্যাসের অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন। তিতাসের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন খানের নামে অফিসের আশেপাশে ও পেট্রোবাংলায় পোস্টার সাঁটিয়ে হয়রানি ও মানহানি করেন।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকের সাথেই তিনি খারাপ আচরণ করেছেন যার কারণে মানসম্মানের ভয়ে অনেকেই তটস্থ থাকে। সমগ্র চাকুরী জীবনে একজন বসের সাথেও দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেননি। সাবেক কোম্পানি সচিব আব্দুল হাকিম মুক্তা, মাহমুদুর রব, সাবেক জিএম :মনির হোসেন খান,সাবেক জিএম সার্ভিস :(১)মমিনুল হক, (২)আব্দুর রহিম,বর্তমান জিএম: আকন্দ মাহবুব।সাবেক ডিজিএম: সালেহ শরীফ সহ অসংখ্য কর্মকর্তা তার কাছে নিগৃহীত হয়েছেন।বর্তমান কোম্পানি সচিব লুৎফুল হায়দার মাসুম কে নন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা এস.এম হারুন আল রশিদ, খন্দকার জুলফিকার মতিন সহ আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আতিয়ার ছেলে ও ছেলের স্ত্রী কানাডা গমন কালে আর্থিক সংকট দেখিয়ে তিতাসের আঞ্চলিক অফিস প্রধানদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি কমন সার্ভিস বিভাগের ডিজিএম থাকাকালে মিরপুরে তিতাসের অফিস ভাড়া নেওয়ার কে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালার নিকট হতে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলেও শোনা যায়। এবং সেখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করতেন। ভগবতী ব্যানার্জি রোডের অফিসে থাকাকালে সর্বশেষ এক বছরের জন্য বাড়ি ভাড়ার চুক্তি নবায়ন কালে এক মাসের ভাড়া সমপরিমাণ ৬ লক্ষ টাকা বাড়ির মালিকের নিকট জোরপূর্বক হাতিয়ে নেন। তিতাসের কুড়িল অফিসে জাকির কমপ্লেক্সের মালিক জাকির হোসেন কে ৮ লক্ষ টাকা দিতে বাধ্য করেন। চাকুরী জীবনে নিজের স্বার্থ ছাড়া কোম্পানির স্বার্থে কোন কাজ করেনি।
তিতাস গ্যাস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রেজিঃ নং- ঢ ০১৭২০/৮৫ এর ২০২২ সালে অভিষেক ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত স্মরণিকায় সম্পাদক হিসেবে প্রদত্ত বিজ্ঞাপনে কোটি কোটি হাতিয়ে নেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা তার পরিচিত দাবি করে ১০০ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বদলি বাণিজ্য সহ ১০/১৫ বছর আগে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি তিতাসে ভয়ার্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে চলেছেন। আতিয়া বিলকিসের ব্যক্তি জীবন নানা কলঙ্কে ভরপুর।
এই বিষয়ে কথা বলতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি শাহ নেওয়াজ পারভেজ এর মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।তিনি নিজকে একজন অসুস্থ্য মহিলা দাবি করলেও ক্ষেত্রমতো চিৎকার, চেচামেচি কিংবা অকথ্যভাষায় আক্রমন করা অথবা কান্নাকাটি করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং করা, প্রয়োজনমতো এসব প্রয়োগ করা তার ধান্দাবাজির অশুভ কৌশল। পরিচিত জনদের এসব পরিষ্কার।এই মহিলার দৌরাত্ম হতে তিতাস গ্যাসের আতঙ্কিত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা মুক্তি পেতে চায়।যাকে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি, মহিলা হয়েও অবিশ্বাস্য ভাষায় অকথ্য গালিগালাজ,কিংবা উপর থেকে শাসিয়ে সবাইকে দাবিয়ে রেখে আসছেন। ফলে মান সম্মানের ভয়ে কেউ টুশব্দ করার সাহস পাচ্ছে না।
আতিয়া বিলকিস মিতুর দাপটে তটস্থ সকলেই।সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা আতিয়া আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে দিন পার করছেন। নির্যাতিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রশ্ন এই সৈয়দা আতিয়া বিলকিস এর খুঁটির জোর কোথায়?তার এই ধরনের নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড থেকে থেকে রেহাই পেতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।