সারাফাত হোসেন ফাহাদ (দোহার) : দোহার থানা কর্তৃক ক্লুলেস হত্যা ও দস্যুতা সংঘটিত চক্রের ৯ (নয়) জন আসামী গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
ঘটনার বিবরণ জানা গেছে, বাদী শেখ ছোহরাব এর ছোট ভাই শেখ শহীদ (৩৭) একজন অটোরিক্সা চালক এবং সে শেখ শহীদ অটো গ্যারেজ নামে একটি অটো গ্যারেজের ব্যবসা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করিত। গতবছরের ২২ নভেম্বর, দিবাগত রাত অনুমান ১১ টার সময় বাদীর ছোট ভাই শেখ শহীদ দোহার থানাধীন চর লটাখোলা সাকিনস্থ বাদীর বাড়ী হতে রাত্রিকালীন খাবার খেয়ে দোহার থানাধীন লটাখোলা সাকিনস্থ নতুন বাজার এলাকায় শেখ শহীদ তাহার অটো গ্যারেজে যায়।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর, সকাল অনুমান সাড়ে ৭ টার সময় উক্ত গ্যারেজ হতে চার্জকৃত অটোরিক্সা নেওয়ার জন্য জনৈক রিফাত হোসেন (২০) এসে দেখতে পায় গ্যারেজের টিনের সার্টার খোলা কোন সাড়া শব্দ নেই। জনৈক রিফাত হোসেন কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে গ্যারেজের ভিতর উকি দিতেই দেখতে পায় খাটের উপর বাদীর ভাই শেখ শহীদ এর মৃত দেহ পড়ে আছে।
জনৈক রিফাত হোসেন সাথে সাথে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে বাদীর ছোট ভাই শেখ শহীদকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। বাদী সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাহার ভাইয়ের মৃত দেহ দেখতে পেয়ে দোহার থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়।
থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত শেখ শহীদ (৩৭) এর লাশের সুরহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করেন।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে শেখ ছোরহাব (৬০), পিতা-মৃত শেখ করম আলী, সাং-চর লটাখোলা, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা বাদী হয়ে দোহার থানায় এজাহার দায়ের করলে অফিসার ইনচার্জ, দোহার থানার মামলা নং-১১, তারিখঃ-২৪/১১/২০২৪ ইং, ধারা-৩৯৪/৩০২ পেনাল কোড রুজু করেন।
তদন্ত : ক্লুলেস চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি শুরু থেকে থানা পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। মামলা রুজু সাথে সাথে ঢাকা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আনিসুজ্জামান মহোদয় তাৎক্ষনিক ভাবে এই হত্যা ও দস্যুতা সংগঠনকারী চক্রকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মো: জসীম উদ্দিন, পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে জনাব মোঃ আশরাফুল আলম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, দোহার সার্কেল মহোদয়ের নেতৃত্বে জনাব মোঃ রেজাউল করিম, অফিসার ইনচার্জ, দোহার থানা জনাব নুরুন্নবী ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), দোহার থানা ও মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই(নিঃ) আরিফুজ্জামান মিয়া, সঙ্গীয় অফিসার এসআই(নিঃ) হামিদুর রহমান ও ফোর্সদের সহ একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করেন।
তদন্ত টিম মামলার শুরু থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ বিভিন্ন স্থানের সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তর সহায়তায় গত ৫ জানুয়ারী অভিযান পরিচালনা করে দোহার থানাধীন বিলাশপুর কুতুবপুর এলাকা হতে তদন্তে প্রাপ্ত আসামী মোঃ মানিক মোল্যা ও সিরুতাজ বেগম দ্বয়কে গ্রেফতার করে এবং আসামী মোঃ মানিক মোল্যার নিকট হতে ভিকটিমের লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। আসামী সিরুতাজ বেগম ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পরবর্তীতে গতকাল মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারী, আসামী সিরুতাজ বেগম এর দেওয়া তথ্য মতে হত্যা ও দস্যূতা সংগঠনকারীর মূল হোতা সুমন খাঁ কে ডিএমপি ঢাকার দারুসসালাম থানার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
আসামী সুমন খাঁ কে একই তারিখ আদালতে প্রেরণ করা হলে সে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামী সুমন খাঁ এর দেওয়া তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করে অন্যান্য সহযোগী আসামী মাহবুব আমজাদ, আল আমিন (ভাংগারী ব্যবসায়ি), আল আমিন (রিক্সাওয়ালা), মালেক, শাহ আলমদের দোহার থানাধীন বিভিন্ন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার লুন্ঠিত মালামাল ১ (এক) টি মোবাইল ফোন, ১ (এক) টি রিক্সা, ৮ (আট) টি ব্যাটারী, বিভিন্ন স্থান থেকে আসামীদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, আসামী সুমন খাঁ ও মাহবুব ভিকটিমের গ্যারেজে প্রবেশ করে ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ০১টি মোবাইল ফোন, ০১টি অটোরিক্সা, ১৬টি ব্যাটারী নিয়ে চলে যায়। লুন্ঠিত মালামাল অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় বিভিন্ন ভাংগারির দোকানে বিক্রয় করে বলে জানা যায়। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের চেষ্টা অব্যহত আছে। মামলাটি তদন্তাধীন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মোঃ মানিক মোল্যা (৪২), পিতা- মৃত: রমজান মোল্যা, মাতা- মৃতঃ গোলজান বিবি, স্থায়ী : (সাং-বিলাশপুর) , উপজেলা/থানা- দোহার, জেলা-ঢাকা,। সিরুতাজ (৩৯), পিতা-আফছের খাঁ, মাতা-আকিমন নেছা, স্বামী/স্ত্রী- মোঃ মানিক মোল্যা,স্থায়ী: (সাং-বিলাশপুর), উপজেলা/থানা- দোহার, জেলা-ঢাকা। মোঃ সুমন খা (৩২), পিতা-মোঃ সোলেমান খান, মাতা-মর্জিনা বেগম, গ্রাম-নারায়নপুর, থানা দোহার, জেলা-ঢাকা। মোঃ মাহবুব (৫০), পিতা-মৃতঃ শেখ জনাব আলী, সাং-চর লটাখোলা, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা, আমজাদ (৩৫) পিতা-মৃতঃ তমিজ উদ্দিন, সাং-দক্ষিণ জয়পাড়া গাংপাড়, এ/পি-সাং-চর লটাখোলা, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা। মোঃ আল আমিন (৪২), (রিক্সাচালক), পিতা-ইসমাইল, সাং-কার্তিকপুর (কুসুমহাটি), থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা। আল আমিন (৩৫), (ভাংগাড়ীর দোকানদার), পিতা-শেখ আলাউদ্দিন, সাং-চরলটাখোলা, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা। মালেক (৫৭), (রিক্সার দোকানদার), পিতা-শেখ তোফাজ্জল, সাং-জয়পাড়া, গাংপাড়, থানা-দোহার. জেলা-ঢাকা। এবং শাহ আলম (৩৬), (ব্যাটারির দোকানদার), পিতা-শুকুর আলী, সাং-রায়পাড়া, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা।
উদ্ধারকৃত মালামাল সমুহ যথাক্রমে, ১ (এক) টি মোবাইল ফোন। ১ (এক) টি রিক্সা। এবং ৮ (আট) টি ব্যাটারী।