জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব।

নিজস্ব প্রতিবেদক : জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে, কাজ না করিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন কে কর্পোরেশনকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. আহসান হাবিব জনস্বার্থ প্রকৌশল অধিদপ্তর নোয়াখালী জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকালীন, “সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্প থেকে হাতিয়া উপজেলায় মেসার্স এন কে কর্পোরেশন ২ কোটি ৯৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৫ টাকার কার্যাদেশ পায়।

উক্ত কাজের প্যাকেজে টেস্ট টিউবওয়েল, প্রোডাকশন টিউবওয়েল, ওভারহেড ট্যাংক, পাইপলাইন ও ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কার্যাদেশ ছিল। এ সকল কাজের ব্যয় ধরা ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন কে কর্পোরেশনকে দিয়ে এ সকল কাজ না করিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিব ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে কাজের সম্পূর্ণ বিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করেন।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে ১২-৬-২০২৪ তারিখ ৩৬০৫ স্মারক মূলে প্রকল্প পরিচালক মোঃ হানিফ স্বাক্ষরিত দুই সদস্যর একটি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়।
উক্ত পরিদর্শন টিমকে মাঠ পর্যায়ের কাজ পরিদর্শন করে ২৫ -৬- ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
ওই চিঠিতে এম বি, বিলের কপি, মালামাল পরীক্ষা রিপোর্ট ও পানি টেস্ট রিপোর্টসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়।
পরিদর্শন টিমের প্রথম সদস্য আউটসোর্সিং সহকারি প্রকৌশলী দীপাঞ্জন চৌধুরীকে তার সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করে তার কাছে মাঠ পর্যায়ে কাজ পরিদর্শনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব ন। আপনি পিডি অফিসে যোগাযোগ করুন। পরিদর্শন টিমের অপর সদস্য ধ্রুবচন্দ্র মজুমদারকে তার সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করে তার কাছে পরিদর্শনে কি পাওয়া গেল? জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে আমি কোন চিঠি পাইনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
ওভারহেেড ট্যাঙ্ক ও পাইপ লাইনের ডিজাইন কত তারিখে অনুমোদন দেয়া হয়? উৎপাদিত নলকূপ ও পাইপলাইনের মালামাল কত তারিখে ঠিকাদার জমা দিয়েছে? এবং কত তারিখে পরীক্ষার জন্য তা প্রেরণ করা হয়েছে? কত তারিখে পরীক্ষা শেষে তা কাজে ব্যবহার করা হয়েছে?রাজধানীর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পিডি অফিসে এসকল বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হানিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন,আমি এসব বিষয়ে কিছু জানিনা।
আপনার স্বাক্ষরিত পরিদর্শন টিম কি রিপোর্ট জমা দিয়েছে? জানতে চাইলে তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে বলেন, পরিদর্শন টিম গঠন করে পাঠিয়েছি কিনা তা আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। আপনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন। আমার কাছে এসে সময় নষ্ট না করে জাতির জন্য কাজ করেন।মাঠে যেয়ে দেখেন কাজ আছে কিনা। আগে সম্পূর্ণ বিল দিয়ে পরে কাজ করাচ্ছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য শেষ, আপনি এখন আসতে পারেন। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হানিফের এই বক্তব্যে থলের বিড়াল লুকিয়ে আছে কিনা? তা দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুধু এখানেই নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীবের তুঘলকি কাণ্ডের শেষ নয়। তিনি পাবনায় কর্মকালীন সরকারি অর্থ লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতির অভিযোগে পাবনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়। শুধু তাই নয় সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে সরকারের অনুমতি ব্যতীত অননুমোদিতভাবে প্রকৌশলী আহসান হাবীব বিদেশ ভ্রমণ করেন। যা তার পাসপোর্ট পর্যালোচনা করলে বেরিয়ে আসবে।
তার রয়েছে আরো বহু তুঘলকি কান্ড, সরকারি অনুমতি ছাড়া অননুমোদিতভাবে তিনি তৃতীয় বিয়ে করেন। ডাক্তার সুমনা ইসলাম নামে এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তিনি এই তৃতীয় বিয়ে করেছেন বলে সূত্র জানায়। এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি।
নেত্রকোনায় নির্বাহী প্রকৌশলী চলতি দায়িত্বে থাকাকালীন তার তৃতীয় স্ত্রী ডাক্তার সুমনা ইসলামের নামে বাসুকা কর্পোরেশন নামীয় লাইসেন্স করে ওই লাইসেন্সে স্ত্রীকে তারই স্বাক্ষরে নেত্রকোনায় ১ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ দশমিক ৯০৬ টাকার নলকূপ বসানোর কার্যাদেশ দেন। এ কাজের জন্য প্রকৌশলী আহসান হাবিব তার তৃতীয় স্ত্রী ডাক্তার সুমনা ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৌশলী আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ থাকায় ৯ মে ২০২২ তারিখ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চাকুরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সূত্র জানায় ,প্রকৌশলী আহসান হাবীব চাকুরী হতে বরখাস্ত হলেও তাকে বেশি দিন চাকুরীর বাহিরে থাকতে হয়নি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লুটপাটের রাজ্যের অন্যতম অংশীদার প্রকৌশলী আহসান হাবিব অদৃশ্য শক্তির কেরামতিতে নোয়াখালীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বসে যান। কিভাবে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হলো বা কিভাবে তিনি আবার চাকুরিতে ফিরে এলেন তা পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। জাতির এক অজানা অধ্যায়।
বরখাস্তের পর নোয়াখালীর নির্বাহী পরকৌশলী হয়ে তিনি আবারও নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এন কে কর্পোরেশনকে কাজ ছাড়াই ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল দিয়ে দেন। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ভয়াবহ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় তাকে নোয়াখালী থেকে ঠাকুরগাঁয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়েও তিনি বসে নেই। সেখানেও তিনি নানা আর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। এবং তার চাকুরি জীবনে তিনি যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ লুট পাটের অভিযোগ উঠেছে । এবং কোন কোন জেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রকৌশলী আহসান হাবীব তার নিকট আত্মীয়দের নামে লাইসেন্স করে অধিকাংশ সময় সেই লাইসেন্সে কাজ দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করে থাকেন। অন্য লাইসেন্সে কাজ দিলেও সেই ঠিকাদারের কাছ থেকে তিনি অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নামে বেনামে এবং নিকট আত্মীয়স্বজনের নামে তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত করলে, তার কর্মজীবনের লুটপাটের ফিরিস্তির সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রকৌশলী আহসান হাবীব শুধু সরকারি অর্থ লুটপাটের ক্ষেত্রেই ভয়ংকর নয়, পারিবারিক জীবনেও তিনি ভয়ংকর। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা তার তৃতীয় স্ত্রী ডাক্তার সুমনা ইসলামকে তিনি গর্ভবতীকালিন অবস্থায় নানাভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করেছেন।
এখানেই শেষ নয়, ডাক্তার সুমনা ইসলামের সাথে যৌথ মালিকানায় একটি ফ্লাট কিনে প্রকৌশলী আহসান হাবিব আইনগত প্রক্রিয়ায় তার অংশ ডাক্তার সুমানা ইসলামকে বুঝিয়ে দিলেও এখন আবার নানাভাবে মালিকানা দাবি করছেন।
ডাক্তার সুমনা ইসলামকে ফ্লাট থেকে উচ্ছেদ করতে হয়রানি মূলক মামলাসহ সন্ত্রাসী পাঠিয়ে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে প্রকৌশলী আহসান হাবিব। এ বিষয়ে ডাক্তার সুমনা ইসলাম জীবনে নিরাপত্তা চেয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করেছেন।