নইন আবু নাঈম তালুকদার (বাগেরহাট) : বনের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খাদ্যের সংকট ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে সুন্দরবনের সাপ এখন আর বনেই সীমাবদ্ধ নেই—ক্রমেই তারা লোকালয়ে চলে আসছে। সুন্দরবনের পূর্ব পাশে অবস্থিত বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় ২০২৪ সালে বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত ৩২টি সাপ উদ্ধার করে পুনরায় বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অজগর। এ পর্যন্ত উদ্ধারকৃত ৩২টি সাপের মধ্যে রয়েছে ২৫টি অজগর, ২টি দাঁড়াস, ২টি সুতানাগ, ১টি কিং কোবরা, ১টি গোখরা এবং ১টি মনোক্লেড কোবরা।

সম্প্রতি সাউথখালী ইউনিয়নের বগি গ্রামের তরিকুল তালুকদারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বিশাল একটি অজগর সাপ, যার ওজন প্রায় ৪০ কেজি ও দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ ফুট। এছাড়া উপজেলার রাজেশ্বর গ্রামের মধু খাঁনের মাছের ঘেরের জালে আটকে পড়া আরেকটি অজগর সাপ উদ্ধার করেন ওয়াইল্ড লাইফ টিমের সদস্যরা। উদ্ধারকারী দলটির নেতৃত্বে থাকা আলম হাওলাদার জানান, দ্রুত সাপটি উদ্ধার করে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে অবমুক্ত করেন।

সিপিজি, ওয়াইল্ড লাইফ টিম ও বন বিভাগ সম্মিলিতভাবে সাপ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাপ বিশেষজ্ঞ বোরহান বিশ্বাস রমন জানান, “সাপ শুধু সুন্দরবনের নয়, গোটা পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।” তিনি আরও জানান, টাইগার রেসপন্সড প্রকল্পের আওতায় বন সংলগ্ন এলাকার কিছু যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ওয়াইল্ড লাইফ টিমে যুক্ত করা হয়েছে, যারা সাপ উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি এসব স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য সরকারি পর্যায়ে উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার দাবি জানান।
এদিকে বনসংলগ্ন গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ সাপ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশাল আকৃতির সাপগুলো কখনো হাঁস-মুরগির ঘরে, কখনো খড়ের গাদা বা ফসলের মাঠে লুকিয়ে থাকে। এ অবস্থায় শিশু ও গৃহস্থালি প্রাণীদের নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছে এলাকাবাসী।
সরকারি সহযোগিতা ও সচেতনতা বাড়ালে বন ও মানুষের মধ্যে নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।