নিজস্ব প্রতিনিধি ( মাগুরা) : তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে বায়নানামা করে বিভিন্ন সময়ে স্বাক্ষর করে ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেওয়ার পরেও জমি রেজিষ্ট্রি করে দিচ্ছে না মাগুরা সদর উপজেলার ভিটাসাইর গ্রামের আব্দুল খালেক ও মিটুল। জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা বললেই নানা প্রকার তালবাহানা করছেন তারা। ভয়ভীতিও দেখাচ্ছেন মিটুল একাধিক যুবদল নেতার মাধ্যমে।

এ দিকে টাকা দিয়েও জমি রেজিষ্ট্রি করে না দেওয়ায় আব্দুল খালেক ও তার সন্ত্রাসী পুত্র মিটুলের বিরুদ্ধে মাগুরা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন জমি ক্রেতা ঘোড়ামারা গ্রামের মোহাম্মদ হবিবুর মোল্লাা।

মাগুরা পুলিশ সুপার ও সেনা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগের বর্ণনামতে-আমি মোঃ হবিবর মোল্যা (৬০), পিতা-মমিন উদ্দীন মোল্যা, সাং-ঘোড়ামারা, থানা ও জেলা-মাগুরা আপনার দপ্তরে হাজির হইয়া বিবাদী আঃ খালেক (৬৫), পিতা-মৃত তাইজউদ্দীন মোল্যা, সাং-ভিটাসাইর, থানা ও জেলা-মাগুরা এর বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করিতেছি যে, মাগুরা থানাধীন আর এস ৬৮ নং ভিটাসাইর মৌজায় ১৩১ নং খতিয়ান ভুক্ত সাবেক দাগ নং-৪৫৬ আর এস দাগ ১২৩০ জমির পরিমান ৩৫.৭৫ শতক যাহা বিবাদীর স্বত্ব দখলীয় জমি। উক্ত বিবাদী ২০২৩ সালে ঐ জমি বিক্রির ঘোষনা দিলে আমি ঐ জমি ক্রয় করার আগ্রহ প্রকাশ করিয়া বিবাদীর সাথে আলোচনা করিলে জমির মূল্য বাবদ ২৬,৪৫,৫০০ টাকা নির্ধারন করি।

গত ইং-১৭/০৯/২০২৩ তারিখে নগদ ৫,০০,০০০ টাকা প্রদান করিয়া ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের উপর লিখিতভাবে বায়নামা তৈরী করি। শর্ত থাকে অবশিষ্ট টাকা ০১ মাসের মধ্যে পরিশোধ করে আমার ছেলে বিদেশ থেকে আসিলে আমার অনুকূলে জমি রেজিঃ করিয়া নিবো এবং অবশিষ্ট ২১.৪৫,৫০০ টাকা পরিশোধ করিয়া দিবো। পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখ ও সময় স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মোট ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করি।
এরপর সর্বশেষ ইং-১০/০৯/২০২৪ তারিখ বেলা অনুমান ১০ টায়, বিবাদীর বাড়ীতে যাইয়া ঐ জমি রেজিঃ করিয়া দিতে বলিলে বিবাদী নানান অজুহাত দেখাইয়া জমি রেজিঃ করিতে কালক্ষেপন করেন।
একপর্যায় বিবাদী আব্দুল খালেক জমি রেজিঃ করিয়া দিবে না মর্মে হুমকি ধামকি দিয়া আমাদের তাড়াইয়া দেন। অতএব, উক্ত বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে আপনার সদয় মর্জি হয়। বিনীত, মোঃ হবিবর মোল্যা, পিতা-মমিন উদ্দীন মোল্যা, সাং-ঘোড়ামারা, থানা ও জেলা-মাগুরা।
এ দিকে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে জানা যায়, ৫ আগস্টে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আব্দুল খালেক তার পুত্র মিটুলের কুপরামর্শ মত জমি রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে বায়না করে ও বিভিন্ন তারিখে স্ট্যাম্পের পেছনে স্বাক্ষর করে নেওয়া ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাত করার জন্য নানা প্রকার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
মিটুল নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে ক্রেতা হাবিবুর রহমান মোল্লাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব নয়নের নাম ভাঙিয়ে আরো দশ লক্ষ টাকা দাবী করছেন। বলছেন- বাড়তি দশ লক্ষ টাকা না দিলে তারা এই জমি কোনদিনই রেজিষ্ট্রি করে দিবেন না। প্রয়োজনে যুবদল নেতা নয়ন ও সবুজের সাথে দেখা করে কথা বলার প্রস্তাব দেন। প্রশ্ন হচ্ছে, জমি কেনা বেচার মধ্যে যুবদল নেতা নয়ন ও সবুজের সাথে দেখা করার প্রশ্ন আসছে কেন? তবে কি বাড়তি দশ লক্ষ টাকা তারাই চাঁদা দাবী করছেন? উল্লেখ্য যে, এই জমিতে এখন লিচু বাগান সহ বিভিন্ন ফলাদীর গাছ রয়েছে। এখন তারা জমির সামনে যুবদল নেতা নয়নের পোষ্টার টানিয়ে রেখেছেন।
এক সময় বাধ্য হয়ে জমি ক্রেতা হবিবুর রহমান মোল্লার পুত্র বিপ্লব হোসেন যুবদল নেতা নয়়নের কাছে গিয়ে বলেন-ভাই,আপনি আমার এই ঝামেলাটা মিটায়় দেন। আপনার নাম বলে মিটুল এগুলো করছে। তখন যুবদল নেতা নয়়ন বলেছেন যে, ”মিটুল আমার লোক, আমি কিভাবে ওরে কি বলবো? তুমি তোমার মত করে মিটায়় নাও”। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, দশ লক্ষ টাকা দিয়ে মিটায় নাও। এই যুবদল নেতা নয়়নের সঙ্গে সব সময় থাকে রনি শিকদার। সে ইতিপুর্বে যুবদল নেতা নয়়নের নাস্তার খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকাও নিয়েছেন। এখন তারা সম্মিলিতভাবে আরো ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছেন।
খোঁজখবর নিয়ে আরো জানাগেছে, মিটুলরা এলাকার বংশীয় চোর।় বছর দুয়েক আগে মিটুল তার সহযোগীদের সহ বাস গাড়ি চুরি করে ধরা পড়ে়ছিল। (মিটুলের ছেলে একবার মোটরসাইকেল চুরি করে ধরা পড়ে়ছিল)। গণপিটুনীও খেয়েছিল। কিছুদিন পর সে গলায় ফাঁসি দিয়ে ়আত্মহত্যা করে। এ সব ঘটনা থেকেই বুঝা যায় তারা কোন চরিত্রের মানুষ। জমি ক্রেতা হবিবুর রহমান মোল্লা এ ক্ষেত্রে মাগুরা জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মাগুরা ক্যাম্প ইনচার্জ ও মাগুরা জেলা বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।