“৬০ হাজার টাকার বেতন, কিন্তু সম্পদে রাজা” — সওজের জাকিরুলের বিলাসী সাম্রাজ্যের অন্তর্দৃষ্টি

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বরিশাল বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) হিসাবরক্ষক জাকিরুল ইসলাম—দেখতে ভদ্র, কথায় মিষ্টি, কিন্তু তার অর্থকোষে ঢেউ ওঠে কোটি টাকার। মাসে মাত্র ৬০ হাজার টাকার সরকারি বেতন—তবুও খুলনা থেকে রাজধানী পর্যন্ত তার নামে-বেআইনি বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, এমনকি এক হেলিকপ্টারের গল্প এখন জনমুখে রূপ নিয়েছে উপাখ্যানের।


বিজ্ঞাপন

কথায় বলে, “হিসাবরক্ষক মানেই হিসাবের মানুষ”—কিন্তু জাকিরুলের হিসাব বুঝতে এখন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টদেরও নোটবুক খুলে বসতে হয়। সওজের অফিসে তার নাম উচ্চারিত হয় একরকম শ্রদ্ধা ও শঙ্কার মিশ্রণে। কারণ ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নাকি তার টেবিল থেকে নড়ে না—ঠিক যেমন মরুভূমিতে বৃষ্টি ছাড়া ফুল ফোটে না।

“বেতন ৬০ হাজার, কিন্তু গাড়ি ছয়টি” :  সওজ ভবনের কর্মচারীরা বলেন, “স্যার একদিন হোন্ডায় আসতেন, এখন কনভয় নিয়ে আসেন।” খুলনার সোনাডাঙ্গায় তার একটি নয়, দুইটি রাজপ্রাসাদ সদৃশ বাড়ি—দুটি বাড়ির মাঝখানে গেট, ভেতরে রোলস রয়েসের গ্যারেজ, গাছের ছায়ায় লুকানো ‘বসার ঘর’।


বিজ্ঞাপন

বয়স পঞ্চাশ পেরোয়নি, কিন্তু হাতে সোনার ব্রেসলেট, পায়ে ইতালীয় জুতা, আর গলায় বিদেশি পারফিউমের ঘ্রাণে অফিসজুড়ে তৈরি হয় “অর্থনৈতিক পরিবেশ দূষণ।”


বিজ্ঞাপন

ভুয়া বিল, আসল ভাগাভাগি : সওজের প্রকল্পের হিসাব যখন জাকিরুলের হাতে যায়, তখন সংখ্যার জাদু শুরু হয়। এক কোটি টাকার প্রকল্প কাগজে হয়ে যায় আঠারো কোটি। ফাইল ঘোরে, বিল ওঠে, আর জাকিরুলের ব্যাংক একাউন্টে বাজে “চিং চিং” সুর। সহকর্মীরা বলেন—“ওনার পেশা হিসাবরক্ষক, প্যাশন বিল-ভাউচার।”

স্ত্রী রত্না সুলতানার ‘নকশা ব্যবসা” :  জাকিরুলের স্ত্রী রত্না সুলতানা নকশা বিভাগের কর্মকর্তা। নাম শুনলেই অনেকে বলেন, “নকশা করেন বাড়ির, না ব্যাংক ব্যালেন্সের?” অভিযোগ আছে—দম্পতি মিলে এমন এক ‘অর্থনৈতিক ডিজাইন’ করেছেন, যাতে সরকারি অর্থে তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য।

হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারি : সবচেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায় হেলিকপ্টার কাহিনি। গত বছর দেশে হইচই পড়ে যায়—একজন হিসাবরক্ষক নাকি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার কিনেছেন! তদন্তে নাকি দেখা যায়, জাকিরুল বলেছিলেন, “ট্রাফিক জ্যামে সময় নষ্ট করতে ভালো লাগে না।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎপরতা : দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা এখন জাকিরুল পরিবারের ব্যাংক হিসাব, সম্পত্তির কাগজ, এমনকি হেলিকপ্টারের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত খতিয়ে দেখছেন। এক কর্মকর্তা বলেন— “এমন হিসাব আমরা দেখিনি। সরকারি হিসাবও ছোট মনে হয় ওনার সামনে।”

যোগাযোগের চেষ্টা : এই প্রতিবেদনের জন্য জাকিরুল ও তার স্ত্রী রত্না সুলতানার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। বরং এক সাংবাদিক জানান, তার মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে এসেছিল “বুঝে শুনে লিখবেন” মর্মে হালকা হুমকি।

উপসংহার : দেশে এখন নতুন সরকার, পুরনো কর্মকর্তারা অনেকেই তদন্তের মুখে। কিন্তু জাকিরুল এখনো অফিসে হাসিমুখে বলেন—“আমার হিসাব মিলছে, শুধু দেশেরটা মেলেনি।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *