ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষক ‘ধনপতি’ বনে গেছেন। তিনি বিগত ১৭ বছর যাবত শিক্ষাকতা ও কোচিং বাণিজ্যের আড়ালে অসংখ্য কলেজ ছাত্রীর ও সহজ সরল নারীর সর্বনাশ ঘটালেও মান সম্মান রক্ষার্থে কেই সেটি প্রকাশ করেন নি। আর নারী সমাজের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এই কলেজ শিক্ষক একটার পর একটা নারী শিকার করে গেছেন।

কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী ও মেডিকেল পড়ুয়া কন্যা ঘরে থাকলেও তিনি তাদের মান সম্মানের কোন তোয়াক্কা করেন নি। আওয়ামী আমলে স্থানীয় এমপি ও ক্ষমতাসীন নেতাদের সাথে ‘সাপ্লাইয়ার কাম ক্যাশিয়ার’ সম্পর্ক গড়ে তুলে তিনি উপার্জন করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ শহরে একটি বাড়ী ও ২/৩ একর জমির মালিক। কথিত আছে যে, তিনি ঝিনাইদহ জেলার দুই মহাপ্রতাপশালী আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও হিরন চেয়ারম্যানের নানা অপকর্মের সহযোগী ছিলেন। তার কাছে কোচিং করতে আসা কলেজের ছাত্রীদের তিনি নানা প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও হিরন চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে যেতেন। সেখানে তাদের সম্ভ্রমহানি করা হতো। এ ছাড়া তিনি শিক্ষাকতার ক্লিন ইমেজকে ব্যবহার করে মিন্টু ও হিরন চেয়ারম্যানের গোল্ড স্মাগলিং ব্যবসার ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন। আর এ পথেই তিনি ঝিনাইদহের ‘ধনপতি’ বনে গেছেন।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কলেজ ছাত্রীদের নিয়ে ‘একান্ত অভিসারে’ যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কেবল কলেজ ছাত্রীই নয় তিনি ভদ্র সমাজের কিছু নারীকেও ব্ল্যাকমেল করেছেন। তাদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন পার্ক,রিসোর্ট এমন কি কক্সবাজারেও আনন্দ সময় কাটিয়েছেন। শিক্ষক সমাজকে কলংকিত করা এই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ মিলন। অবৈধ মিলনে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী বলেই নামের শেষে তার ‘মিলন’ নামটি সার্থক হয়ে ধরা দিয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে জানাগেছে,ঝিনাইদহ মিঞা জিন্নাহ আলম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তিনি। শহরেরে আরবপুর এলাকায় বাড়ী করে বসবাস করছেন। তার স্ত্রীও একটি বেসরকারী কলেজের বাংলার অধ্যাপক। দুই কন্যার মধ্যে এক কন্যা মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করেন। তিনি ২০১৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের হিরন চেয়ারম্যানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০২ সালে তিনি বর্তমান স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এই বিয়েটিও স্বাভাবিকভাবে হয়নি। দীর্ঘদিন প্রেম করে মেয়েটির সর্বনাশ করার পর তিনি বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। তখন মেয়েটি বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী সালিশ দরবারের মাধ্যমে তাদের বিকয়ে দিয়ে দেন। তিনি কলেজে চাকুরি পাওয়ার পর নিজের বাসস্থলে কোটিং সেন্টার খুলে বসেন। এরপর তার কলেজের ও কোচিং সেন্টারের হিন্দু ছাত্রীদের টার্গেট করে একটার পর একটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সুত্রমতে, তিনি আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন নেতাদের মনোরঞ্জন করে এটার পর একটা কলেজ ছাত্রীকে চাকুরী দানসহ বিদেশে স্কলারশীপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্ল্যাকমেল করেছেন। শাসক দলের ক্যাডারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। তার সেক্সুয়াল হেরাসমেন্টের শিকার হয়ে কত মেয়ে যে, কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন তার কোন হিসেব নেই। তিনি একবার তার কোচিং সেন্টারের একজন মহিলা শিক্ষিকাকে ‘একান্তে সময়’ কাটাবার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই মহিলা শিক্ষক তার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং কোচিং সেন্টারে পড়াতে আসা বন্ধ করে দেন।
আরো জানাগেছে, তিনি ২০২৫ সালের মে মাসের ৪ তারিখে একজন পরনারী নিয়ে ফুড সামারী নামের রেষ্টুরেন্টে খেতে যান। ২০২৫ সালের ২৬ সে এপ্রিল আরেকজন পরনারীকে নিয়ে নাটোর জেলার একটি পার্কে ঘুরতে যান। ২০২৫ সালের ১৬/১৭/১৮ তারিখ তিনি আরেকজন পরনারীকে নিয়ে ঝিনাইদহ-চুয়াডাংগা রোডের আক্কাছ পার্কে ঘুরতে যান। তাকে কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন পার্কেও একজন পরনারীর সাথে ঘুরতে দেখা গেছে। ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে তাকে আরেকজন পরনারী সাথে আক্কাছ পার্কের রিসোর্ট এরিয়ায় দেখা যায়।
তিনি ২০২৫ সালের জুলাই মাসের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত এক পরনারীকে নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করেন। সেখানে তারা লিভটুগেদারে লিপ্ত হন। তার নামে ২ টা ফেসবুক আইডি পাওয়া গেছে। তবে দুটোই লকড করা।
তার নারী লাম্পট্যের এখানেই শেষ নয়। তিনি ঢাকায় এলেই অভিজাত পাড়ার মক্ষীরাণীদের রংমহলে অবস্থান করে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেন।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, ১৬ হাজার টাকা স্কেলের বেতন পেয়ে এই কলেজ শিক্ষক কিভাবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় ২/৩ একর জমি কিনলেন? কিভাবে আরবপুরে বাড়ী নির্মাণ করলেন? কিভাবে তিনি পরনারী নিয়ে পার্ক,রিসোর্ট ও সী-বীচে ঘুরছেন? শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার পরিচালনা নিষিদ্ধ হলেও তিনি কিভাবে নিজ বাড়ীতে কোচিং বাণিজ্য করছেন? এতোগুলো নারী কেলেংকারীর ঘটনার পরেও তিনি কিভাবে মিঞা জিন্নাহ আলম কলেজে শিক্ষক পদে চাকুরিতে বহাল আছেন? শিক্ষাকতা করার মত তার কোন নৈতিক চরিত্র আছে কি? তার কোচিং সেন্টারে যে সব মেয়ে পড়তে যায় তারা কি নিরাপদ ?
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আমলে শিক্ষাকতা পেশার আড়ালে তিনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর মিন্টু ও হিরন চেয়ারম্যানের ‘সাপ্লাইয়ার কাম ক্যাশিয়ার’ দায়িত্ব পালন করে অবৈধ পথে যে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তার হিসাব নেওয়া হচ্ছে না কেন ? বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার আমলেও তিনি বুক ফুলিয়ে ঝিনাইদহ শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কি করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র,জনতা,বিএনপি, এনসিপি,জামায়াত নেতারা এবং ঝিনাইদহের আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার,জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এই আওয়ামী সুবিধাভোগী শিক্ষকের ক্ষেত্রে নিরব কেন?
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ শিক্ষক ফিরোজ আলম মিলন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি উল্লেখিত কোন ঘটনার সাথেই জড়িত নন। তবে এলাকাবাসীর দাবী, শিক্ষক ফিরোজ আলম মিলন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। তার ইনকাম ট্যাক্স ফাইল পরীক্ষা করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। তা ছাড়া তিনি যে ছাত্রী ও নারী নীপিড়নকারী. দু:চরিত্র একজন কলেজ শিক্ষক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করলে সেটারও ভুরিভুরি প্রমাণ মিলবে।
এ বিষয়ে তারা শিক্ষা উপদেষ্টা,শিক্ষা সচিব, পরিচালক, শিক্ষা (খুলনা) এবং ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার,দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা ও সেনা বাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।