রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ নির্মাণে ধীরগতি  : অসুস্থতা ও অনুপস্থিতির অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মী চাকমার বিরুদ্ধে 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ স্বাস্থ্য

রাঙামাটি প্রতিনিধি  :  দেশের ২৯তম সরকারি মেডিকেল কলেজ রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের (রামেক) স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ অনুমোদন পাওয়ার পরও শুরু না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের রাঙামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মী চাকমার শারীরিক অসুস্থতা ও নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিতির কারণেই প্রকল্পের গতি কার্যত থেমে গেছে।


বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া এই মেডিকেল কলেজ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এতদিন স্থায়ী ক্যাম্পাসের দেখা মেলেনি। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে একই ছাদের নিচে ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, হোস্টেল, লাইব্রেরি, আধুনিক ল্যাব, অডিটোরিয়াম ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা বহুবার স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও গণপূর্ত ভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।


বিজ্ঞাপন

রামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া বলেন, “প্রতিষ্ঠার প্রায় এগারো বছর পর অবশেষে ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ একনেকে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। খবরে আমরা উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিগ্রহণকৃত ২৬ একর জমিতে কোনো কাজ শুরু হয়নি—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”


বিজ্ঞাপন

গণপূর্ত বিভাগ রাঙামাটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাডাম (শর্মী চাকমা) এখানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ধীর হয়ে গেছে। তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না, প্রায়ই চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য যান। কিছুদিন আগে ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন, এখন আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”

স্থানীয় ঠিকাদার রঞ্জু আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, “এক্সেন ম্যাডামের জামাই চট্টগ্রামে থাকেন, তাই উনি সেখানেই বেশিরভাগ সময় কাটান। গত পাঁচ মাসে মেডিকেল কলেজের প্রাক্কলন তৈরির কাজও শুরু হয়নি। টেন্ডার কবে হবে বলা মুশকিল। কাগজপত্র পিয়নরা তার বাসায় নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করায়। শুনেছি, প্রধান প্রকৌশলী ম্যাডামকে ঢাকায় ডেকে ১৫ দিনের মধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

অবকাঠামো কাজ শুরু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য মেডিকেল কলেজে চলে যাচ্ছেন। রামেকের একাডেমিক শাখার তথ্য অনুযায়ী, স্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজ না হওয়াই মাইগ্রেশনের প্রধান কারণ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শর্মী চাকমার শারীরিক অসুস্থতা ও অনুপস্থিতি বিবেচনা করে তাকে চট্টগ্রামে বদলি করে রাঙামাটিতে তরুণ ও কর্মক্ষম একজন নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়ন করা জরুরি। নইলে ২০২৮ সালে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্ধেক কাজও শেষ হবে না।

রাঙামাটির মানুষ এখন অপেক্ষায়—স্থবির প্রকল্পে কবে গতি ফিরবে এবং বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্বপ্ন কবে বাস্তবে রূপ নেবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *