পদোন্নতির হাওয়ায় ভাসছেন কায়কোবাদ : ফ্যাসিবাদের দোসরের রঙ্গিন কাহিনি

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  : বাংলাদেশের গণপূর্ত অধিদপ্তরে এখন চলছে এক অদ্ভুত নাটক। নাটকের নায়ক—তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদ। তবে এটা কোনো অফিস-অফিস খেলা নয়, বরং “পদোন্নতির অলিম্পিকস”—যেখানে কায়কোবাদ একাই ছুটছেন, আর বাকি যোগ্য কর্মকর্তারা দর্শক হয়ে হাততালি দিচ্ছেন।

ফ্যাসিবাদের আঁচলে পদোন্নতির গোপন ফর্মুলা : কায়কোবাদের পদোন্নতির যাত্রা সাধারণ সরকারি নিয়মে হচ্ছে না। বরং তিনি ভর করেছেন ক্ষমতার আঁচল আর ফ্যাসিবাদের সোনার ডানায়। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন—সবাই নাকি তার টাকার কাছে বশীভূত। আর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দিনরাত কাজ করছে শুধু তার জন্য।

মিডিয়ায় যখন তার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলো, তখন ভদ্রলোকের চালাকি ছিল চোখ ধাঁধানো। তিনি নাকি প্রতিবাদ প্রকাশ করে বললেন, “সবই মিথ্যা!” অথচ সেই প্রতিবাদপত্র এতটাই মিথ্যা ও কল্পকাহিনি দিয়ে ভরা ছিল যে পাঠকেরা হেসে কুটিকুটি—ঠিক যেন টেলিভিশনের কমেডি নাটক।

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কাহিনি : কায়কোবাদ ভেবেছিলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে, ঠিকাদার দিয়ে লবিং করিয়ে তিনি সব আড়াল করতে পারবেন। কিন্তু মানুষ এখন আর এতটা বোকা নেই। সবাই বলছে—এটা একেবারে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মাস্টারপ্ল্যান

তিনি আবার এতটাই সাহসী যে তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েও সাংবাদিকদের চিঠি দিয়ে ডাকেননি। বরং জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের কাছে মৌখিক তলব পাঠিয়েছিলেন। ভাবটা যেন—“আমি ডাকলে সম্পাদক দৌড়ে আসবেন।” সম্পাদক অবশ্যই আসেননি। কারণ, প্রকৌশলীর চেয়ার আর সম্পাদকীয় টেবিল এক জিনিস নয়।

যোগ্যতা নয়, দোসরত্বই মূলধন :  গণপূর্তে নিয়ম হলো—পদোন্নতির জন্য কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করা। কিন্তু এখানে নিয়ম উল্টো। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার নাকি সরাসরি কেবল কায়কোবাদের নামই প্রস্তাব করেছেন। কেন? কারণ, তিনি নাকি আরেক ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী। ফলাফল—যোগ্যরা লিস্টের বাইরে, দোসররা ভিআইপি।

বদলি, দাপট আর পানিশমেন্ট পোস্টিং : কায়কোবাদের নাম জড়িয়েছিল “মুজিববর্ষের” বিশাল আয়োজনেও। কারা কাজ পাবে, কারা টাকা বানাবে—সবই নাকি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু যখন সব কেলেঙ্কারি ধরা পড়লো, তখন তাকে বদলি দিয়ে বসানো হলো চট্টগ্রামে। অনেকেই বলছেন, এটা ছিল পানিশমেন্ট পোস্টিং। আর মজার বিষয় হলো, তার জায়গায় দায়িত্ব পেলেন জুনিয়র প্রকৌশলী তৈমুর আলম। ফলে অফিসে গল্প হলো—“বড় সাহেবের গায়ে ধাক্কা লাগলে জুনিয়রও হয়ে যায় বস।”

দুর্নীতি থেকে স্বপ্নের পদোন্নতি :  হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কায়কোবাদ কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন, সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। উত্তর সহজফ্যাসিবাদের দোসরত্বই তার আসল মূলধন। এই মূলধন দিয়েই তিনি তৈরি করেছেন প্রাসাদোপম বাড়ি, গড়েছেন প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক, আর এখন ছুটছেন চূড়ান্ত পদোন্নতির পথে।

শেষ কথা : অফিসের ক্যান্টিনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মজা করে বলছে,দুর্নীতি যদি যোগ্যতা হয়, কায়কোবাদের পদোন্নতি নিশ্চিত।কিন্তু যদি মেধা আর সততা হয় যোগ্যতা, তাহলে তার নাম তালিকার বাইরে থাকত অনেক আগেই। তবু বাস্তবতা হলো, ফ্যাসিবাদের দোসরদের জন্য সবকিছুই সম্ভব। কায়কোবাদও তার প্রমাণ। এখন দেখার বিষয়—এই রঙ্গিন নাটকের পর্দা নামবে কবে, আর যোগ্য কর্মকর্তারা কি কোনোদিনই নায়ক হতে পারবেন?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *